মোটা অংকের মুক্তিপণের জন্যেই আজিমপুরে শিশু অপহরণ
রাজধানীর আজিমপুর থেকে অপহৃত আট মাস বয়সী শিশুকে অপহরণের ঘটনায় পাঁচজন জড়িত বলে জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, মোটা অংকের মুক্তিপণের জন্যই ডাকাতির সঙ্গে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৪ জনকে ধরার চেষ্টা চলছে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফাতেমা আক্তার শাপলা (২৭) চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন। মূলত আরিসা জান্নাত জাইফাকে অপহরণের উদ্দেশে এক সপ্তাহ আগে ফাতেমা আক্তার শাপলা শিশুটির মায়ের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী বলে দাবি করে। তাকে বাসায় রাখলে শিশুটিকে সে দেখভাল করতে পারবে বলেও জানায়।
শিশুটির মা ফারজানাও সরল বিশ্বাসে বাসায় তোলেন ফাতেমা আক্তার শাপলাকে। বাসায় উঠার পরদিনই শিশুটিকে শাপলা অপহরণ করে পালিয়ে যায়। শাপলার পরিকল্পনা ছিল মোটা অংকের টাকা দাবি।
এর আগে, শুক্রবার রাতে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে শাপলাকে গ্রেফতার করে র্যাব। ফাতেমা আক্তার শাপলা সেলিম হোসেনের স্ত্রী ও তার স্বামীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায়।
র্যাব জানায়, গত ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে আরিসা জান্নাত জাইফাকে অপহরণ করে শাপলা। এসময় তার সঙ্গে তিন পুরুষ ছিল। তারা শিশুটির নানি ও মাকে অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় শুক্রবার দিনভর টক অব দ্য টাউন ছিল শিশু অপহরণের ঘটনাটি। পরে রাতে লালবাগ থানায় শিশুটির পরিবার অভিযোগ করলে নড়েচড়ে বসে প্রসাশন।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, আরিসা জান্নাত জাইফার মা ফারজানা আক্তার চাকরি করেন এবং তার বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারটি গত ৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন।
তিনি বলেন, গত এক ১ সপ্তাহ আগে তার মায়ের সাথে অফিসে যাতায়াত করার সময় গ্রেফতারকৃত শাপলার পরিচয় হয়। এসময় শাপলা শিশুটির মায়ের কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে জানায়।
আরও জানায়, ফাতেমা আক্তার শাপলা অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ২য় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করছে। তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভাল করতে পারবে।
শিশুর মা সন্তানের দেখাশুনার কথা চিন্তা করে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে দেওয়ার জন্য রাজি হন। পরে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে বাসায় আসে এবং শিশুটির মাকে ২ হাজার টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে রাত্রি যাপন করে। পরের দিন সকালে ফাতেমা আক্তার শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে জানায়, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। পরে তিন যুবককে ফাতেমা আক্তার তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে শিশুটির মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে।
এসময় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগিরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে শিশু জাইফাকে নিয়ে চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার শাপলা একজন গৃহিনী। তিনি ২০১০ সালে তার পরিবারের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। তিনি ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। ২০২৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং গত ৩-৪ মাস পূর্বে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করে।
এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানায় র্যাব।