ছোট যানবাহন চলাচল নীতিমালা প্রণয়নের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-11-25 16:13:03

দেশের সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ৪০ লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন ও চালকের হাতে নামমাত্র ফিতে লাইসেন্স প্রদান করা গেলে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতে পারে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জরুরীভিত্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ছোট যানবাহন চলাচল নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি করেন।

তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে দেশে ইজিবাইকের বিস্তার লাভ করলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এইখাত নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নানান ফোরামে প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে সারাদেশে ৪০ লাখ অটোরিকশা থেকে দৈনিক ১১০ কোটি টাকা বছরে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে চাদাঁবাজী হয়েছে। এই চাদাঁবাজীর কারণে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ দেশের সকল সড়ক-মহাসড়ক, নগর-বন্দরে মোটরচালিত অটোরিকশা দৌরাত্ম বেড়ে চরম আকার ধারণ করেছে। পতিত আওয়ামী লীগের অনেক এমপি, মন্ত্রীও এই অবৈধ অটোরিকশা পরিচালনা করে অবৈধ চাদাঁবাজীতে যুক্ত ছিলেন, তাই এইখাতের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। অবাধে আমদানি, স্থানীয় গেরেজে সহজলভ্য ভাবে তৈরি করে সহজে রাস্তায় নামানোর অবাধে সুযোগ থাকায় এবং দেশে অন্যান্য খাতে সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায়, স্বল্পপুঁজিতে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ অটোরিকশা কিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। এতে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকটসহ কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে। প্রশিক্ষণবিহিন লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষের হাতে এসব অটোর স্টিয়ারিং এর কারণে সড়ক নিরাপত্তায় ভয়ানক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে দেশের সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশ উঠে গেলে এসব অটোরিকশা আরো বেপরোয়া হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলাচল শুরু করে। গত ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট ০৩ দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ বা বিধি নিষেধ আরোপ করার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে সরকার রাজধানী থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্ছেদ করতে গেলে পুরো রাজধানীর লক্ষ লক্ষ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ও মালিকেরা সংগঠিত হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক পথ, রেলপথে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন, সরকার ২০২১ সালে “থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযানের সুুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১” নামে একটি খসড়া নীতিমালা প্রনয়ণ করে। অথচ করোনা সংক্রমণে গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুবাধে ২০২১-২০২২ সালে প্রায় ৮ লাখ হারে দুই বছরে ১৬ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ১০ লাখ হারে ২০ লাখ মোটরসাইকেল রাস্তায় নামে। সাথে সাথে সারাদেশে এইসব যানবাহনের কারণে সৃষ্ট যানজট ও দুর্ঘটনা দ্বিগুণ হলেও অদৃশ্য কারণে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় নীতিমালাটি চূড়ান্ত করেনি। ভারত থেকে একচেটিয়াহারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, অটো টেম্পু, হিউম্যান হলার আমদানি অব্যহত রাখার স্বার্থে তৎকালীন সরকার এই নীতিমালা থেকে সরে এসেছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে এই নীতিমালা প্রনয়ণের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, রিকশা-ব্যাটারিরিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক থ্রি-হুইলার যানবাহন মালিক ও চালক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিক মিয়া, চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক চার্জাররিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সানাউল্লাহ চৌধুরী, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর