সেন্টমার্টিনে ট্রাভেল পাস নিয়ে ধোঁয়াশা

, জাতীয়

আবদু রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2024-11-28 19:32:13

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) জাহাজ চলাচলের দিনক্ষণ ঠিক করা ছিলো। যাত্রী সংকটের কারণে তা পিছিয়ে ১ ডিসেম্বর করা হয়। এদিকে, সেন্টমার্টিন যেতে ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক করা হলেও সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। জেলা প্রশাসন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির কেউ-ই সুনির্দিষ্টভাবে জানে না ট্রাভেল পাসের বিষয়টি।

তবে, সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিদিন সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন দুই হাজার পর্যটক। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে রাত্রিযাপন করতে পারবে কিন্তু নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারী মাসে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের কক্সবাজারের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, “পর্যটক নিয়ে বৃহস্পতিবার জাহাজ সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও যাত্রী সংকটের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। যাত্রীদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগ্রহ আছে, কিন্তু ট্রাভেল পাস নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন তারা। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন জাহাজ যাবে। ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। বেশ সাড়াও পাচ্ছি।”

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন জানান, কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের একটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ে যাতায়াতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। জাহাজের ফিটনেস এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে কেয়ারী সিন্দাবাদকে কক্সবাজার সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, “কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাট থেকে ১ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হবে। একটি জাহাজ এখন পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে যাওয়ার অনুমতি নিয়েছে।"

এদিকে, গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন হয়।

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ওঠার আগে এন্ট্রি পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস নিতে হবে।

ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করবে গঠিত কমিটি। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর কোন হোটেলে থাকবেন, তা লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করা হবে। এসব বিষয় না মানলে গুণতে হতে হবে জেল-জরিমানা।


ট্রাভেল পাস নিয়ে ধোঁয়াশা:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব দেওয়ার পর সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নানা নিয়মকানুন এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার মধ্যে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক করা হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের অ্যাপস থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। যদিও গুগল প্লে স্টোরে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের কোনো অ্যাপস এর সন্ধান পাওয়া যায়নি। একারণে দ্বিধায় পড়েছে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকরা। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছুই জানে না প্রশাসনও।

বার্তা২৪.কম-এর এই প্রতিবেদক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছে। তারাও ট্রাভেল পাসের বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

সেন্টমার্টিন সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ট্রাভেল পাসের বিষয়টি আমরাও নিশ্চিত না। কিভাবে, কোথায় এবং কিভাবে ট্রাভেল পাস নিতে হবে তা জানা নেই। যদিও মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের অ্যাপস এর কথা বলা হয়েছে। আমাদের কমিটির কাজ হচ্ছে কক্সবাজার সদরের কোন পয়েন্ট থেকে জাহাজ ছাড়বে সেটি নিশ্চিত করা এবং পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ট্রাভেল পাসের বিষয়টি আমরা দেখছি না। এবিষয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি বলতে পারবে।

বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ডের উপ-পরিচালক (বিপণন ও ব্রান্ডিং) মহিবুল ইসলাম এবিষয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সেন্টমার্টিন ট্রাভেল পাস নিয়ে আলাদা একটা ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে। এটি কবে নাগাদ শেষ হবে বলা যাচ্ছে না। ট্রাভেল পাসের বিষয়টি সরকার সিদ্ধান্ত নিবে।

তবে অনুমতি পাওয়া জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদের কক্সবাজারের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজে ৩৫০ জন ধারণক্ষমতা। যেহেতু এখনো ট্রাভেল পাস নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে কম পর্যটক হওয়ায় আপাতত ট্রাভেল পাস ছাড়া যেতে পারবে। পরবর্তীতে ট্রাভেল পাস আসলে সেটি সমন্বয় করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর