পালিয়েছে ঠিকাদার, বিপাকে মেয়র

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 00:31:33

মেয়রের সকল ভালো উদ্যোগ আর প্রচেষ্টা আড়াল হচ্ছে নগরীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তা আর ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায়। প্রত্যাশিত উন্নয়ন ব্যহত হওয়াতে মেয়রের প্রতি বেড়েছে নগরবাসীর ক্ষুব্ধতা। রংপুর সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ও ব্রিজের কাজের অগ্রগতি না হতেই পূর্বের মেয়রের আমলে ঠিকাদাররা বিল নিয়ে উধাও হওয়াতে এই জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি বর্তমান পরিষদের।

রংপুর সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি ১৯ ফেব্রুয়ারি। গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শপথ বাক্যপাঠ করে দায়িত্ব গ্রহণ করে নতুন পর্ষদ। রংপুর মহানগরকে নাগরিক বান্ধব স্মার্ট আধুনিক নগরী হিসেবে গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়রসহ কাউন্সিলররা। তবে এই এক বছরেই অনেকের মনে জমাট বেঁধেছে হাজারো প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাব দিতে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নাগরিকদের সাথে মুখোমুখি হবেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।

তারা বলছেন, নগরবাসীর ভোগান্তি আর অভিযোগ শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন যাওয়ার রোডটিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিয়ে। বিগত মেয়রের সময় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই টাকা নিয়ে সটকে পড়েন। এ কারণে ওই প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক প্রসস্থকরন-সংস্কার, ড্রেন ও ফুটপাথ নির্মাণে বেধে দেয়া প্রকল্পের সময়সীমা বছর চারেক আগেই শেষ হয়েছে। ব্যস্ততম সড়ক শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন রোড, ঘোড়াপীর থেকে রেলক্রসিং হয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডের সংযোগ সড়কের কাজ শুরুর পর নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি এই সড়কগুলোর। বর্ষা মৌসুম এসে এই সড়কগুলো হয়ে উঠে গ্রামের ছোট ছোট পানি ভরা খালের মতো। এছাড়াও ৬টি নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও সেগুলোতে নেই কোন নির্মাণ গতি।

উন্নয়ন প্রত্যাশী মানুষের কাছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্রিজের কাজে এমন ‘কচ্ছপ মার্কা উন্নয়ন’ যেন বিতৃষ্ণা এনে দিয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান পরিষদের ভালো কাজগুলো চাপা পড়ছে প্রলম্বিত এই দুর্ভোগের কাছে।

নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার মেহেদী হাসান শরীফ, আমজাদ হোসেন, গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বিগত ৪-৫ বছর ধরে আমাদের এই রাস্তা হবে হবে করেও হচ্ছে না। গত মাসেও কাজ শুরু হবার কথা শোনা গেল। কিন্তু শাপলা থেকে স্টেশন রোডটার কোন সংস্কার হচ্ছে না। বৃষ্টি আসলে অন্য রাস্তা হয়ে ঘুরে যেতে হবে। তখন এই ব্যস্ততম রাস্তাটি খালে পরিণত হয়।

এদিকে, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘কাজ শেষ না করে কীভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নেয়, এটা আমার বোধগম্য নয়। সিটির সেই প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এতে করে কাজের স্বচ্ছতা তৈরির পাশাপাশি অন্য প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা সতর্ক হবেন।’

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দাতাসংস্থা জাইকার অর্থায়নে সিটি গভারনেন্স প্রজেক্ট-সিজিপি’র আওতায় ২২৮.২৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ব্যাচ-২ এর মাধ্যমে ২৪টি প্যাকেজের মধ্যে ১৬টি (চুক্তি মূল্য ১৫৭.১০ কোটি টাকা) কাজ চলমান আছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে রাস্তা, বক্স কারভার্ট, আরসিসি গার্ডার, ব্রিজ ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণ। দ্রুতগতিতে এসব কাজ এগিয়ে চলছে।

এদিকে, জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও নিজেদের ঘাড়ে দোষ নিতে নারাজ রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘বারবার চুক্তি ভঙ্গের পরও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতা এবং কাজ শেষ না করেই বিল নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো লাপাত্তা হওয়াতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে ব্যাঘাত হচ্ছে। তবে এই দুর্ভোগ আর থাকবে না। ইতোমধ্যে শাপলা চত্বর থেকে স্টেশন রোডটি নির্মাণে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সড়কের কাজ শুরু হবে।’

নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী জানান, বর্তমান মেয়রের বিগত বছরে নগরীতে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন স্ট্রীট লাইট নির্মাণ, পুন:নির্মাণ, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণে এসেছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইতোমধ্যেই ৩০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো ৮৮ কোটি ২ লাখ টাকা। চলমান কাজ শেষ হলে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজগুলো শুরু ও শেষ হলে নগরবাসী রাস্তাঘাট, ড্রেন, অবকাঠামো এবং লাইটিংয়ের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

বরাবরের মতো বিগত মেয়রের ওপর দায় চাপালেন বর্তমান নগর পিতা। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘আগের সিটি করপোরেশনের মেয়র কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে নাই। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই গত একবছর বিভিন্ন সময় চলমান কাজগুলো টেন্ডার করে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে তা শুরু করেছি। কোনো নোটিশ ছাড়াই আমি নিজেই চলমান কাজগুলো তদারকি করছি। কোন জায়গায় হেরফের হলেই আবারও আমি নতুনভাবে কাজগুলো করে নিচ্ছি।

মেয়র বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব টেন্ডার দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করার ব্যাপারে আমার পরিষদ বদ্ধ পরিকর। নগরবাসীর এই দুর্ভোগ দুর আরও এক বছর সময় লাগবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে নগরীর চেহারাই বদলে যাবে। নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর