কাঠালিয়ায় বিলুপ্তির পথে ঘুঘু পাখি

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঝালকাঠি | 2025-01-11 16:09:49

ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার গ্রামাঞ্চলে চির চেনা ঘুঘু পাখি এখন বিলুপ্তির পথে। নিরাপদ আবাস ও খাদ্যের অভাব, নির্বিচারে পাখি নিধন, ফসলের জমিতে অধিকমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত ঘুঘু পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

কাঠালিয়ার পথে-প্রান্তে এখন আর সকাল-দুপুর ক্রউ-উ-উ-উ-উ বা গুউ-গুউ-গুউ-গুউ স্বরে ঘুঘু পাখির মিষ্টি মধুর ডাক শোনা যায় না। কৃষি জমি, খামার, ঝোপ-ঝাড়, বন-জঙ্গল ও গ্রামের গাছে গাছে ঘুঘু পাখির দেখা মিলত। এখন আর এমন দৃশ্য দেখা যায় না।

মূলত ধানই ঘুঘুর প্রধান খাদ্য। তাছাড়া ঘাস ও আগাছার বিচি, শস্যদানা, গাছের কুঁড়ি ও কচি পাতাও খায় এরা। স্ত্রী ঘুঘু সাধারণত বছরে ৩ বার এক জোড়া করে ডিম পাড়ে। মাত্র ১৪ থেকে ১৫ দিনে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে।

এক সময়ে কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেচঁরী, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, আমরিবুনিয়া, বড় কাঠালিয়া, আউরা, শৌলজালিয়া, আওরাবুনিয়া, ও জাঙ্গালিয়া গ্রামের মাঠে, গাছের ডালে ঘুঘু পাখির দেখা মিললেও এখন এ পাখির দেখা পাওয়াই দুরুহ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়িত শিকারীদের হাতে ধরা পড়া ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অত্যন্ত ভীতু ও লাজুক প্রকৃতির ঘুঘু হারিয়ে যেতে বসেছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি প্রজাতির ঘুঘু পাওয়া গেলেও, তিলা ঘুঘু ছাড়া অন্য ৫টি প্রজাতির ঘুঘু খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। ঘুঘু পাখির হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, অতিমাত্রায় শব্দ দূষণ, বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে বসত বাড়ি ও কলকারখানা স্থাপন।

কাঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. নুর-ই- আলম ছিদ্দীকী বলেন, কালের বিবর্তনে ঘুঘু পাখি অন্যান্য সব পশুপাখির মতো বিলুপ্ত হতে বসেছে। একসময় আমাদের দেশের বনে জঙ্গলে, শহরে, গ্ৰামে সব জায়গায় এই পাখি প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে খুবই কম দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে ঘুঘু পাখি দিন দিন কমে যাচ্ছে। শিকারি কর্তৃক ঘুঘু শিকার একটি অন্যতম কারণ। অনেকে শখের বশে বন্দুক দিয়ে এই পাখি শিকার করে থাকেন। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এছাড়াও ঘুঘু পাখি ঝোপ ঝাড়ে ও ছোট গাছে এবং মানুষের বসত বাড়ির আশেপাশে বাসা বানায়। এজন্য মানুষজন সহজেই ঘুঘু শিকার করতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান বিন ইসলাম বলেন, ঘুঘু আমাদের অতি উপকারী একটি পাখি। ঘুঘু পাখির অনেক উপকারিতা রয়েছে। এই পাখি ফসলের ক্ষেত থেকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও ফড়িং শিকার করে খায়। এতে ফসল ভালো হয়। কৃষক ও আর্থিকভাবে লাভবান হয়।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. হাসিবুর রহমান সজীব বলেন, ঘুঘুর মাংসে রয়েছে অনেক পুষ্টি গুণ। যা মানুষের শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করে। কিন্তু দেশীয় প্রজাতির ঘুঘু শিকার করা আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু বিদেশি প্রজাতির ঘুঘু পালন করা ও খাওয়া যায়। এভাবে ঘুঘু আমাদের অনেক উপকার করে থাকে, যা আমরা বুঝতে পারি না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মিশ্রিত খাবার খেয়ে পাখির সংখ্যা ও ডিম পাড়ার পরিমাণ কমে যাওয়া, ঝোপ-ঝাড় ও গাছপালা কেটে ফেলায় নিরাপদ আবাসস্থলের অভাব, নির্বিচারে শিকার করা সহ বিভিন্ন কারণে ঘুঘু পাখি বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলেছে।

কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘুঘু পাখি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ঘুঘু পাখি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর