বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিগত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও করছে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার ।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে চিটাগং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফাওজুল কবির খান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ক্রিয়েটিভ এবং কম্পিউটার সিক্লড শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে। ডিগ্রি একটা এন্ট্রি। কিন্তু মার্কেটে তোমকে প্রমাণ করতে হবে। অন্যের কাজ করো। মূল্যবোধ, দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।
এসময় তিনি কর্মমুখী শিক্ষার বিষয়ে জোর দেন।
ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির পক্ষে এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সফল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব নুরুন আখতার।
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন শিল্পগ্রুপ ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) কিহাক সুংধ।
অনুষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষার্থীকে তাদের অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ‘টপ অ্যাচিভার্স’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এই শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ প্রোগ্রামে অপ্রতিরোধ্য সাফল্য অর্জন করে সম্মানিত হন।
সিআইইউ’র শিক্ষার মান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসার তার বক্তব্যে বলেন, সিআইইউ শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীরা যেন একটি শিক্ষিত, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে।
জিয়া সাইবার ফোর্সের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. ফরাহাদ হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন যুবদল কর্মী মনিরুল বিশ্বাস (৩৮)। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজবাড়ীর পাংশায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেব্রত সরকার।
গুলিবিদ্ধ মনিরুল বিশ্বাস রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা গ্রামের আব্বাস বিশ্বাসের ছেলে।
জানা গেছে, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে পাংশা উপজেলার জাগিরকয়া বাজারে জিয়া সাইবার ফোর্সের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ থেকে দ্রত সময়ের মধ্যে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন বক্তারা। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ কয়েক’শ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ফেরার পথে জাগিরকয়া বাজার এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা পাংশা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক আরিফুল ইসলামকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলিবিদ্ধ হয় যুবদল কর্মী মনিরুল বিশ্বাস ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাংশার পাট্টা ইউনিয়নে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকা থমথমে অবস্থায় রয়েছে। আতংকিত সাধারণ সাধারণ মানুষ।
সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেব্রত সরকার জানান, তারা এক যুবকের গুলিবিদ্ধের সংবাদ শুনেছেন। ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। বিষয়টি দ্রুতই তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন মা খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন ছেলে তারেক রহমান।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সেন্ট্রাল লন্ডনের বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে স্ত্রী’সহ মাকে দেখতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
হাসপাতালের প্রবেশপথে অপেক্ষমান সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে মায়ের জন্য দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কোনো মন্তব্য করেননি তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে এটাই বলবো, সন্তান হিসেবে মায়ের জন্য দোয়া চাই।
এদিকে, রাতের মধ্যেই খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড বসার কথা রয়েছে। বোর্ডে তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের পাশাপাশি যুক্ত থাকবেন লন্ডন ক্লিনিক ও বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস হাসপাতালের ডাক্তাররাও ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
এর আগে, সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সব রিপোর্ট শুক্রবারের (১৭ জানুয়ারির) মধ্যে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। যুক্তরাজ্যের দ্যা লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
বন্দরনগরী পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম বোট ক্লাব। পাশে বিশাল সমুদ্র। সকাল থেকেই নোনাজল আর ঠাণ্ডা বাতাস যেন প্রশান্তির ছোঁয়া দিচ্ছে। তারই মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শত শত তরুণ-তরুণী, গায়ে কালো গাউন, মাথায় সমাবর্তনের টুপি। চোখে আনন্দ, গর্ব আর সামনের দিনগুলোর স্বপ্ন। আজ চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন ২০২৫।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানস্থলে। কারও হাতে ক্যামেরা, কেউ বন্ধুদের জড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ বাবা-মায়ের সঙ্গে আবেগঘন মুহূর্ত কাটাচ্ছেন। আজকের এই আয়োজন তাদের দীর্ঘ পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের উদযাপন।
নতুন পোশাক, নতুন উচ্ছ্বাস শুধু কালো গাউনেই সীমাবদ্ধ নয় সাজ। অনেকেই গাউনের নিচে পরেছেন বর্ণিল শাড়ি, সুদৃশ্য স্যুট, পাঞ্জাবি। সাজের এই প্রতিযোগিতা যেন বলছে-আজকের দিনটা সত্যিই বিশেষ।
প্রথমেই যা চোখে পড়ে, তা হলো শিক্ষার্থীদের মুখে সেই গর্বিত হাসি, চোখে স্বপ্ন। অনেকেই নতুন পোশাক পরেছেন, গাউনে ও টুপি সাজে সজ্জিত। নতুন সাজে সাজানো এই তরুণ-তরুণীরা যেন আজকের দিনের একেকটি নায়ক। কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের মা-বাবার সঙ্গে ছবি তুলছেন, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত, অন্যদিকে অনেকেই হুট করে সেলফি নিয়ে ছবি ভাগ করে নিচ্ছেন। একটু পরেই শুরু হবে তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—সনদ গ্রহণ। আজকের দিনটি তাদের জন্য যেন এক নতুন শুরু, আর এটি তাদের জীবনের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির রাশেদ বলেন, আজকের দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। নতুন পোশাক, ক্যামেরার সামনে হাসি—সব মিলিয়ে অন্যরকম এক অনুভূতি।
বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত ছবি তুলছিলেন মাহিরা সুলতানা। বললেন, আজকের দিনটা আর আসবে না। তাই স্মৃতিগুলো যত্ন করে ধরে রাখতে চাইছি।
সমুদ্রের বাতাসে বিদায়ের আবেগ
অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চের পাশেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা। সামনের দিগন্তে নীল জলরাশি। সমুদ্রের বাতাস যেন তাদের প্রশান্তি দিচ্ছে, একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছে—আজ ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিন।
অনেকের চোখে আনন্দ, আবার অনেকের চোখে অশ্রু। স্নাতক শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বললেন, এই বন্ধুত্ব, এই ক্লাস, গ্রুপ স্টাডি, ক্যান্টিনের আড্ডা—সবকিছুই মিস করবো।
স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সাইয়্যেদ দাউদ বললেন, এই ডিগ্রি শুধু একটি কাগজ নয়, এটি পরিশ্রমের প্রতীক। সমুদ্রপাড়ে আজতের সময়টুকু, পাহাড়ের উপর সিআইইউ ক্যাম্পাস—সবকিছুই মনে থাকবে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মতো অভিভাবকরাও ছিলেন আবেগপ্রবণ। সন্তানদের এমন অর্জন সরাসরি দেখতে পেয়ে গর্বিত তারা।
আইন বিভাগের রাফিয়া হোসেনের বাবা বললেন, আজ মেয়েকে সমাবর্তনের গাউন পরে দেখতে পেরে গর্বিত। এই অর্জনের পেছনে তার কঠোর পরিশ্রম ছিল।
এদিকে শিক্ষকরাও আবেগাপ্লুত। শিক্ষার্থীদের সফলতা দেখে তারা যেমন আনন্দিত, তেমনি কিছুটা আবেগীও।
সিআইইউর এক শিক্ষক বলেন, এই শিক্ষার্থীরা আমাদের গর্ব। আজ তারা নতুন দিগন্তে পা রাখছে। তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হোক।
সমুদ্রের গর্জন আর নোনাজলের বাতাসে বিদায় নিচ্ছেন সিআইইউর শিক্ষার্থীরা। তবে এই বিদায় শুধুই আনুষ্ঠানিক, স্মৃতি আর বন্ধুত্বগুলো থেকে যাবে আজীবন....
থিম সং আর সোনার বাংলার সুরে অনুষ্ঠান শুরু
এদিকে বেলা সাগে ১১টায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শুরু হয় সিআইইউর থিম সং ‘শিক্ষা আমার অধিকার, গর্ব আমার সিআইইউ’ দিয়ে। সব শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে গাইতে শুরু করেন, সুর আর কণ্ঠে মিলেমিশে হয়ে ওঠে একতাবদ্ধ। একেবারে পরবর্তী মুহূর্তে গাওয়া হয় ‘সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’, পুরো মাঠে এই সুর ছড়িয়ে পড়ে, যা শিক্ষার্থীদের মনে যেন নতুন প্রেরণা যোগায়। এই গানটি যেন আজকের দিনের অনুপ্রেরণা, শিক্ষার গৌরবকে তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানটি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোর পাঠ, সবাই একযোগে শুনতে মনোযোগী হন।
২১৮৯ শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণ:
এবারের সমাবর্তনে ২১৮৯ জন শিক্ষার্থী সনদ পাচ্ছেন। এর মধ্যে ১৪৫২ জন স্নাতক, ৭৩৭ জন স্নাতকোত্তর। ১৪ জন পাবেন ‘টপ অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড’, আর ২ জনকে ‘ভ্যালেডিক্টোরিয়ান’ সম্মাননা দেওয়া হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসার বলেন, এই সমাবর্তন শুধু শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের স্বীকৃতি। তারা আজকের এই অর্জন দিয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাউজুল কবির খান। তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ তুলে দেবেন।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে শিল্পগ্রুপ ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং।