সোনালী আঁশ পাটকে বাঁচানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 07:07:42

পাট পরিবেশ বান্ধব পণ্য হওয়ায় পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতের মধ্যদিয়ে রপ্তানি ও শিল্প পণ্য হিসেবে পাটের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, বিশ্ব পরিবর্তনশীল। প্রাকৃতিক তন্তু থেকে কিছু কৃত্রিম তন্তু এসে যাওয়ায় একসময় বিশ্ববাজারে পাটের চাহিদাটা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। তবে এখন আমাদের জন্য একটা ভালো সম্ভাবনা এসেছে যে, মানুষ এখন পরিবেশ সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন।  পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতাই আমাদেরকে একটা সুযোগ করে দিয়েছে। কেননা পাট হচ্ছে সবচেয়ে পরিবেশ বান্ধব। সবথেকে বেশি কার্বন গ্রহণ করে পাট গাছ। পাট পরিবেশ বান্ধব বলেই আজকে বিরাট একটা সম্ভাবনা সামনে আছে। পাট আমাদের সোনালী আঁশ। এই সোনালী আঁশকে আমাদের বাঁচাতে হবে।

বুধবার (৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পাট দিবস-২০১৯ উদযাপন, পুরস্কার বিতরণ এবং পাট পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পাট আমাদের একটি কৃষিপণ্য। কিন্তু কৃষিপণ্যের সাথে সাথে পাট আমাদের শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পাটই আমাদের রপ্তানি যোগ্য পণ্য। পাট এবং পাটজাত পণ্য থেকেই একসময় পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটি হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রের যত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত তার সিংহভাগ আসত এই পাট থেকে।

পাটশিল্পের উন্নয়নের ইতিহাস তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, পাটখাতের বিকাশের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে স্বাধীনতার সময় থেকেই, যেহেতেু আমাদের বাংলাদেশে সবথেকে ভালো মানের পাট উৎপাদিত হত কাজেই পাটের ন্যায্য মূল্যের দাবিটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন ভাষা আন্দোলনের সংগ্রাম শুরু করেন ১৯৪৮ সাল থেকে, এরপর থেকেই কিন্তু এই পাটের ন্যায্যমূল্যের জন্যও তিনি তার প্রতিটা সংগ্রাম করতেন। এবং ১৯৫২ সালে বন্দীখানা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ভাষা আন্দোলনের উপর একটা কনভেনশন করেছিলেন। সে কনভেনশনটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বার কাউন্সিলের অ্যাসোসিয়েশনের হলে। সেখানে যে দাবিগুলো তিনি উপস্থাপন করেছিলেন, সেদাবীর ভেতরে পাটের ন্যায্যমুল্যের দাবিটাও ছিল। এবং একটি স্মারকলিপিতে করাচিতে তিনি তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের কাছে উপস্থাপন করে করাচিতে প্রেস কনফারেন্স করেন। ১৯৫৪ সালের যে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, সে নির্বাচনের ইশতেহারেও ছিল পাটের ন্যায্যমূল্যের দাবি। কাজেই পাট আমাদের এমনটা একটা পণ্য, যুগ যুগ ধরেই কিন্তু এই পাটের জন্য সংগ্রাম হয়েছে। আর এই পাট পণ্যটা তখন বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবেই এর চাহিদা ছিল।

পাটশিল্প ধ্বংস হওয়ার জন্য পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকদের দায়ী করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, অর্থাৎ জাতির পিতার দেওয়া সংবিধান যারা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তাদের ভেতরে পাটের প্রতি একটা বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ ছিল। তারা যেন পাটশিল্পটাকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। অথচ এটাই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি পথ। এই যে বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ আর তার সঙ্গে বিশ্ববাজারে চলে আসা কৃত্রিম তন্তু, যেটা পাটের বাজারকে একটা মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে দিল।

পাটের বহুমুখী ব্যবহারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাটের কোনকিছুই ফেলা যায় না। পাটের পাতাটা একটা ভালো সবজি। আমরা পাট শাক খাই। পাট শাকে আয়রন বেশি, ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রিসহ নানা রোগের প্রতিষেধক। আবার পাটের পাতাটা যে মাটিতে পড়ে ওই জায়গার কিন্তু উর্বরতা বৃদ্ধি করে। কেননা পাটের পড়ে যখন ধান লাগায় তখন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এখন পাটের চাও আবিস্কার হয়েছে। পাটখড়িটারও মূল্য আছে। পাটখড়ি থেকে ফার্নিচার, চারকোল, জ্বালানি, একসময় ঘরের বেড়া দেওয়া সহ বহুমুখী ব্যবহার হয়। একসয়ময় আমরা পাটখড়িতে কচা গাছের আঠা দিয়ে ফড়িং ধরে বেড়াতাম। এটা হয়ত শহরের ছেলেমেয়েরা পায়নি। কিন্তু আমরা ছোটবেলায় করেছি। পাটখড়ি দিয়ে খেলতামও। পাটের তন্তুটাকে আমরা আরো উন্নত করার চেষ্টা করছি। পাটের গোড়াটাও ফেলনা নয়।

পাটশিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নানা প্রকল্প, পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রণায় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মীর্জা আজম প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর