মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালের অন্যরকম সংগ্রাম

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ময়মনসিংহ, বার্তা২৪.কম | 2023-12-13 20:09:15

একেবারে সাদামাটা জীবন তার। পায়ে স্যান্ডেল, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে ছুটে চলেন তিনি। সামান্য সময় পেলেই ফিরে যান একাত্তরে। রাইফেল কাঁধে ওই সময়টাতে যেন হয়ে ওঠেন টগবগে জোয়ান। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে নিজের কণ্ঠে তুলে ধরেন যুদ্ধদিনের গল্প। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিশুদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরাই তার কাজ।

বলছিলাম ৬৭ বছর বয়সী বিমল পালের কথা। তিনি থাকেন ময়মনসিংহ নগরীর বলাশপুর মুক্তিযোদ্ধা পল্লীতে সরকারের দেওয়া আবাসনে। তার দিনের শুরুটা হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়ে। স্কুল অথবা কলেজ প্রধানের অনুমতি নিয়ে ক্লাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প বলেন তিনি। ছোট ছোট করে প্রেক্ষাপটগুলো তুলে ধরেন শিক্ষার্থীদের কাছে।

যুদ্ধের গল্প বলতে বলতে আবার ব্ল্যাকবোর্ডে ‘মুক্তিযুদ্ধ আঁকেন’ মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। রেখাচিত্র এঁকে এঁকে গল্পের মতো করে শোনান একেকটি ঘটনাপ্রবাহ।

শুধু স্কুল কলেজেই নয়, পথে-ঘাটে কিংবা পার্কে যেখানেই শিক্ষার্থী দেখেন, সেখানেই আসর জমিয়ে ফেলেন বিমল। তাদের জানান, হালুয়াঘাটের তেলিখালী যুদ্ধে কীভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি, কীভাবে সেই যুদ্ধে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের খতম করেছিলেন, শ্রীবরদী রাজা পাহাড়ের যুদ্ধের কাহিনি, দিঘারকান্দায় জনতার হাতে দুই পাকিস্তানি হানাদার হত্যার গল্প, নালিতাবাড়ীর রাঙামাটি যুদ্ধের কথাসহ ময়মনসিংহ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিকথা। শ্রোতারাও শোনেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। এভাবেই ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ২শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ৪ শতাধিক উন্মুক্ত স্থানে গল্প বলার আসর জমিয়েছেন তিনি। এজন্যই ময়মনসিংহবাসী তাকে চেনেন ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরিওয়ালা’ হিসেবে।

বিমল পাল ছোটদের উপযোগী তিনটি বই প্রকাশ করেছেন। এগুলো হল- ‘তেলিখালী যুদ্ধ’, ‘একাত্তরের গণহত্যা : পাকিস্তানি স্টাইল’ এবং ‘ছোটদের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর গল্প’। এসব বই প্রকাশ করতে আবার ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বিমল। যা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে প্রতি তিন মাসে ১২ হাজার ৬০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। তবুও নতুন প্রজন্ম জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন, বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস জানতে পাচ্ছে বিমল পালের কাছ থেকে।

বার্তা২৪.কমকে বিমল পাল বলেন, ‘আমি স্বাধীনতার পর থেকেই স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে লেখালেখি করতাম। এখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি। কারণ আমি চাই নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুক। আর এতেই আমার তৃপ্তি।’

তিনি জানান, তার পরিবারে বর্তমানে দুই ছেলে ও তাদের স্ত্রী এবং এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী মারা গেছে অনেক আগেই।

বার্তা২৪.কমের কাছে একটি চাওয়ার কথা প্রকাশ করেছেন বিমল পাল। তা হল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন তার লেখা বইয়ের এক কোটি কপি ছাপিয়ে দেন। আর তিনি সেই বইগুলো নিয়ে সারা বাংলাদেশ ঘুরতে চান। যেতে চান দেশের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর