সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
চা পাতা তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা, ছবি: সীরাত মঞ্জুর

চা পাতা তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা, ছবি: সীরাত মঞ্জুর

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সুখ-দুঃখ সবই এই চা বাগানে। ছেলে বয়সে চা বাগানের গাড়িতে কাজ করেছি, চা চারার কলম গাছ কেটেছি। বাগানের লাকড়ি কাটি। এই বাগানে আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীর জন্ম। এখান থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানেই আমাদের জন্ম, এখানেই মৃত্যু!’

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে নিজের জীবনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন ৬৫ বছর বয়সী চা শ্রমিক পুলক রায়।

চা শ্রমিক পুলক রায়।

জীবনের শেষ সময়ে এসেও পুলক রায়ের যেন নেই কোনো অবসর। জীবনের কঠিন সংগ্রাম এখনো চলছে। তরুণ বয়সে বাগানের চা চারার কলম কেটেছেন, গাড়িতে কাজ করেছেন । তবে বয়সের ভারে এখন আর এসব ভারি কাজ পারেন না। পরিবারে স্ত্রী পুত্র কেউ না থাকলেও পেটের দায়ে এখনো চা বাগানের লাকড়ি কাটার কাজ করে যেতে হচ্ছে তাকে। চা বাগানের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন, সেটি ভাবনাতেও আসেনি কখনো। চা বাগানেই যে বন্দী পুলকের জীবন।

চা বাগানে জন্ম, কর্ম থেকে মৃত্যু। এমন জীবন চক্র শুধু পুলক রায়ের নয়, বাগানের প্রায় সব শ্রমিকেরই। চায়ের সবুজ পাতার প্রেমে পড়ে তাদের বেড়ে ওঠা। সেই চাকে ঘিরেই শুরু হয় জীবনের প্রথম কর্ম। নারীরা করেন পাতা তোলার কাজ। আর পুরুষেরা চা বাগান ও কারখানার বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন।

গৌরি মালা পাতা তোলেন, স্বামী উজ্জ্বলও বাগানে কাজ করেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসার তাদের। ছেলে ছোট্ট হওয়ায় স্কুলে পড়লেও টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মেয়েদের পড়ালেখা। বাগান থেকে পাতা তুলে ঘরে ফিরতে কথা হয় গৌরির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন সকাল ৭টায় বের হই। বাগানে পৌঁছায় ৮টায়। কাজ শেষে ফিরি বিকেলে ৪টায়। যা টাকা পাই স্বামীসহ দুজনের ইনকাম দিয়ে ভগবানের দয়ায় চলি। আমাদের কর্ম ও জীবন এই চা বাগানেই সীমাবদ্ধ।' 

কাজ শেষে দল বেঁধে ঘরে ফিরছেন তারা।

একদিন ছেলে-মেয়েরাও তাদের জায়গা নেবে বলে মনে করেন গৌরি। বলেন, ‘এখন আমরা বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেখাদেখি ছেলে-মেয়েরাও করবে। এখানে তাদের বিয়ে-সাদি করাব। এরপর তাদের ছেলে মেয়েরাও একদিন বাগানে কাজ করবে। দুঃখ লাগে না। কিসের দুঃখ! বাগানে যখন জন্ম, বাগানেই কাজ করে খাই।’

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা। পাতা তোলার কাজ শেষ করে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাগানের পাশে বসে নিজের ছেঁড়া কাপড় সেলাচ্ছিলেন জোসনা বালা। ত্রিশ বছর ধরে বাগানে কাজ করছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, 'আমার বয়স এখন ৪৫। ত্রিশ বছর ধরে পাতা তুলছি। কি আর করব, কষ্ট হলেও কর্ম করতে হয়। টাকা পয়সা নেই, জায়গা নেই। আমাদের বাপ দাদারা যেই কর্ম করে খেয়েছেন। আমরাও তাই করে চলছি।' 

নিজেদের আর্থিক দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে জোসনা বলেন, 'এমন না যে আমরা সরকার থেকে কোনো দামি কিছু পেলাম। দুমাস খেলাম। এসময়ে কাজ করা টাকাগুলো জমা রাখলাম, ছেলে মেয়ে শিক্ষা করলাম, নিজস্ব বাড়ি ভিটা বানালাম। এরকম সুযোগ আমরা পাই না। যতদিন কাজ করি ততদিন খাই। ১৭০ টাকা করে পাই। যদি ২৫ কেজি করে ৫০ কেজি পাতা তুলতে পারি তাহলে একদিনে ৩৪০ টাকার মতো পাওয়া যায়। আর যখন গাছে পাতা কম থাকে তখন তো আর বেশি তোলা যায় না। বৃষ্টি হচ্ছে না, গাছে পাতা নাই তেমন। যা পাতা তুলি, তাই পয়সা পাই। যখন পাতা ছিল তখন একশ’ কেজিও পাতা তুলছি। তখন ৭০০ টাকা মত পেয়েছি।' 

পাতার পোটলা নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা।

কাজের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে জোসনা বলেন, 'পাতা তুলতে গিয়ে হাত ফেটে যায়। যারা নতুন তারা আরও হাতে আঘাত পায়। রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়। ওপরে রোদ, নিচে গরম বালি। এর মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়। সপ্তাহে যে বেতন পাই তা দিয়ে চলে না, ঋণ হয়ে যায় অনেক টাকা। ১৭০ টাকায় আমাদের জীবন-মরণ।' 

জোসনা ও গৌরি মালাদের সঙ্গে টাকার অভাবে পাতা তোলার কাজ শুরু করেছেন আমেনা ও ফাল্গুনি রায় নামের দুই কিশোরী। আমেনা বলে, 'পাঁচ ক্লাস পড়েছি। দুই সপ্তাহ আগে পাতা তোলার কাজ শুরু করেছি। রোদে পাতা তুলতে আমার কষ্ট হয়। তারপরও কি আর করব, কাজ করতে হবে।' 

ফাল্গুনি রায় বলে, 'আমি একমাস ধরে পাতা তুলছি। পাঁচ ক্লাস পড়েছি। বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও আমাদের অভাবে তা আর হয় না। তাই পাতা তুলার কাজ করছি।'

মা-বাবার সঙ্গে শহরে থাকলেও শ্বশুর বাড়ি এসে তিন মাস ধরে চা শ্রমিকের কাজ করছেন সুমি। তিনি বলেন, 'আমি মাত্র তিন মাস ধরে কাজ করছি। এটা আমার শ্বশুর বাড়ি। শহরে থাকা অবস্থায় কিছু করতাম না। এখন তো অভাবের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। কেউ তো আর সুখে কাজ করে না।' 

বাগানের মাঠে খেলছিল শ্রমিকের ছেলেরা।

বাগানের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল ১০ বছর বয়সী রাহুল দে। ফেনুয়া টি স্টেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। মা-বাবা দুজন চা শ্রমিক হলেও সে হতে চায় চিকিৎসক। জানতে চাইলে বলে, 'আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। বাগানে কাজ করতে চাই না।' 

চা শ্রমিকেরা প্রতিদিন সকাল হলে দল বেঁধে ছুটে যান বাগানে। কাজ শেষে বিকেল হতেই ফিরে আসেন ঘরে। জীবন-মান উন্নয়নে সবসময় পিছিয়ে তারা। এমন কি তারা অন্য শ্রমিকদের তুলনায় পান সবচেয়ে কম পরিমাণের দৈনিক মজুরি। এভাবে চা বাগানকে ঘিরে বাঁধা পড়ে আছে তাদের জীবন। ছোট্ট শিশু জন্মের পর প্রথম যে দৃশ্য দেখে সেটিও চায়ের সবুজ পাতা। বেড়ে ওঠা থেকে মৃত্যুও এই চা বাগানে।

প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা তিন সপ্তাহ আন্দোলনের পর ২০২২ সালে ২৭ আগস্ট ৫০ টাকা দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান চা শ্রমিকের নূন্যতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা।

   

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে পাশে থাকতে চায় অস্ট্রেলিয়া



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে প্রয়োজনে পাশে থাকতে চায় অস্ট্রেলিয়া বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং।

মঙ্গলবার (২১ মে) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এসব বলেন তিনি।

পেনি ওং বলেন, আমরা অভিন্ন ভাগ্য গড়তে একসাথে কাজ করতে চাই। আন্তর্জাতিক আইন কানুন মেনে ব্যবসা বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তন, বাংলাদেশ একা সমাধান করতে পারবে না। আমরা এই যাত্রায় সাথে থাকতে চাই।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের একা সমস্যা নয়। আমরা এই সংকটের টেকসই সমাধান চাই। বাংলাদেশ এখনও বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা নিয়ে সোচ্চার কণ্ঠস্বর। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক বাড়াতে চায় দুই দেশ। মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে কারিগরি সহায়তা দিতে চায় অস্ট্রেলিয়া। আমরা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের একটি চমৎকার সম্পর্ক আছে। গেল ৫২ বছরের পথ চলায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি মসৃণ ৪ বিলিয়ন ডলারের বিজনেস বাস্কেট। যদিও সাইজে এখনও যথেষ্ট ছোট।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সাথে কোটা ফ্রি ও ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস সুবিধা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও অব্যাহত থাকবে। আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ, তিনটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতা দেবে অস্ট্রেলিয়া। মানবপাচার কমাতে একসাথে কাজ করবে দুই দেশ। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার। মিটিগেশনে সরাসরি যুক্ত থেকে সহযোগিতা করতে চায়। কৃষি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপ হয়েছে। আমরা দক্ষ জনশক্তি রফতানির পক্ষে। দুই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে চাই।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

ব্যক্তিগত তথ্যের অব্যাহত ফাঁস আতঙ্কজনক: টিআইবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও মোবাইল ফোনের কল ডেটা রেকর্ড (সিডিআর)-সহ নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয় ও স্পর্শকাতর তথ্য চুরি ও অনলাইনে বিক্রয়ের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (২১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ জানায় টিআইবি।

সংস্থাটি বলছে, নাগরিকের সংবেদশীল তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে তথ্য পাচার, তাও আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আইডি ব্যবহার করে তথ্য চুরি ও অনলাইনে বিক্রয়ের ঘটনা রীতিমতো আতঙ্কজনক। একইসঙ্গে তা দেশের সাধারণ নাগরিকের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতের সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে ভূলুণ্ঠিত করে। তথ্য ফাঁস এবং এর মাধ্যমে ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি জনগণের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খসড়া ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪-কে ঢেলে সাজিয়ে অতি দ্রুত পাস করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভিন্ন দুই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যের আইডি ব্যবহার করে এনটিএমসির সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য (এনআইডি) ও মোবাইল ফোনের কল ডাটা রেকর্ডসহ (সিডিআর) অন্যান্য গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করে অর্থের বিনিময়ে পাচার করা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের আইডি ব্যবহার করে নাগরিকের সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য পাচারে ঘটনাকে চরম উদ্বেগজনক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সিডিআর-এর মতো এমন ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য চুরির ঘটনা এবারই প্রথম নয়। আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে নাগরিকের জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন গোপনীয় তথ্য চুরির অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকদের।

সর্বশেষ এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য পাচারের ঘটনা ঘটলো যা এই তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত, আবার এমন ব্যক্তিদের ক্রেডেনশিয়াল ব্যবহার করে এই তথ্য পাচার হয়েছে যারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। অর্থাৎ, সরকার যে প্রক্রিয়া ও কারিগরি কাঠামোর মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্যের সুরক্ষার নিশ্চিত করতে চায়, তার সক্ষমতা ও শুদ্ধাচারও প্রশ্নবিদ্ধ। অবস্থাদৃষ্টে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হওয়া অমূলক নয় যে, ডিজিটাল দুনিয়ায় তথ্যের অপব্যবহার ও নজরদারিতে কোনো কোনো মহলের যে আগ্রহ ও তৎপরতা, সে তুলনায় একটি সঠিক ও কার্যকর উপাত্ত সুরক্ষাপ্রক্রিয়া ও কারিগরি কাঠামো তৈরিতে সরকারের আগ্রহ ও সক্ষমতা নেই। অর্থাৎ, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারের গৃহীত যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও আয়োজন তা একদিকে যেমন ফাঁপা বুলি, অন্যদিকে তা ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ -এমন মন্তব্য করা মোটেও অত্যুক্তি হবে না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশের নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরির ঘটনা সামনে আসে, কিন্তু তা রোধে কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত লক্ষ করা যায়নি। একইভাবে, সংবেদশীল তথ্যের চুরি ঠেকাতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও দৃঢ় করার কোনো উদ্যোগের কথাও জানা যায় না। সর্বশেষ এই তথ্য চুরির ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুটির সব ইউজার আইডি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে নাগরিকের তথ্য ফাঁস ও পাচারের সঙ্গে যুক্ত সকলকে গভীরতর তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে, এসব উদ্যোগ অর্থবহ হবে না।

আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দুই কর্মকর্তার ক্রেডেনশিয়াল ব্যবহার করে নাগরিকের সংবেদনশীল তথ্য চুরি করে বিক্রয়ের ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪ এর খসড়া পর্যালোচনা করে আমরা বলেছিলাম, সরকারের অধীনস্ত সংস্থাকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার নামে জবাবদিহিহীনভাবে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার এখতিয়ার দেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

বিচারবিভাগীয় তদারকি ছাড়া সরকারি সংস্থাকে ডেটা সার্ভারে বাধাহীন অনুপ্রবেশের সুযোগ দিলে, তা অপব্যবহার হওয়ার যথেষ্ট ঝুঁকি থাকবে এবং দিন শেষে এই ব্যতিক্রম চর্চাকেই আইনের মূল ধারা হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্য পাচারের এই ঘটনা টিআইবির উদ্বেগের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে। ফলে নাগরিকের গোপনীয়তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খসড়া ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪ ঢেলে সাজিয়ে অতি দ্রুত প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

পুরনো রূপে ফিরেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা



রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাজধানীর অলিগলি থেকে প্রধান সড়কে আগের মতোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চালকেরা। কোন রকম নিয়ম মানা তো দূরের কথা, আগের তুলনায় যেন তাদের রিকশার গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও দুর্ঘটনা রোধে গত ১৫ মে বিআরটিএ ভবনে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টাদের সভায় রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক যেন না চলে এমন নির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নির্দেশনার পর পর তা বাস্তবায়ন করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কঠোর অবস্থান দেখা যায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাধারণ মানুষ সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও কেউ কেউ বলছেন মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের একটা সুযোগ দেওয়া দরকার। এবং আইনের মধ্যে রেখে মূল সড়ক থেকে ভেতরে অলিগলিতে চালাতে দেওয়া যেতে পারে।

হঠাৎ ওবায়দুল কাদেরের এমন নির্দেশে অটোরিকশা চালকেরা পড়েন বিপাকে। তাই পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে গত দু'দিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনের ডাক দেয় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা। আন্দোলনের মুখে সরকারের অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবারও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ঢাকায় চলাচলের অনুমতি পায়।

মঙ্গলবার (২১ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর কালশী এলাকা মোড়ে আবারও ফিরেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য। কোন রকম আইন কানুন না মেনে আগের মতোই এলোমেলো ভাবেই চলছে এই বাহন। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে অনেকটাই অসহায় ও নীরব ভূমিকায়।

অটোরিকশা চালাক সালাউদ্দিনের কাছে উল্টো পথে আসার কারণ জানতে চাইলে বার্তা২৪.কমকে তিনি অকপটে নিজের ভুল স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আসলে আমাদেরও অনেক দোষ আছে জানি। আমাদের বেশিরভাগ চালক সুযোগ পেলেই উল্টো পথে চলাচল করতে বেশি পছন্দ করে। এসময় অনেকে দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছে। কিন্তু আমাদের হুশ হয়নি।

ক'দিন রিকশা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে দুর্ভোগের কথাও জানান তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই অটোরিকশা চালক।

কালশী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গফুর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর সড়কে যানজট অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল বিকেল থেকে আবারও তারা সড়কে আগের মতো বিশৃঙ্খলভাবে রিকশা চালানো শুরু করেছে। কারো কোন কথাই তাদের গায়ে লাগে না। দ্রুতগতির কারণে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে তাদের একটা নিয়মের মধ্যে এনে রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া। নইলে এভাবে অবাধে রিকশা চলাচল করলে যানজট নিরসনে সরকারের কোন পদক্ষেপ কাজে দেবে না।

কালশী মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট কামরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের এখানে যে পরিমাণে গাড়ি চলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। এই সড়ক ব্যবহার করে উত্তরা, মিরপুর, পল্লবী, মিরপুর ডিওএইচএস-সহ প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি ও গণপরিবহন চলাচল করে। এর সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যোগ হওয়ায় ট্রাফিক সদস্যদের হিমসিম খেতে হয়। উল্টো পথে ব্যাটারিচালিত রিকশার নিয়ন্ত্রণ করতে যে পরিমাণে লোকবল দরকার আমাদের তা নেই।

তিনি আরও বলেন, সরকার যেহেতু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সুতরাং খুব শিগগিরই একটা নিয়মের মধ্যে আনা হবে। কয়েকদিন অপেক্ষা করুন আশাকরি প্রতিফলন দেখতে পাবেন।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;

দামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে নিম্নমানের পণ্য বিক্রি, ২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীতে নিম্নমানের পণ্যের উপর নামি-দামি ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রি এবং পণ্যের গায়ে আগের কম মূল্যের উপর পুনরায় অধিক মূল্য লেভেল লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

মঙ্গলবার (২১ মে) নগরীর জিইসি ও ২নং গেইট কর্ণফুলী কমপ্লেক্স পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ে নেমে ব্যবসায়ীদের এমন গরমিল দেখতে পায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, চট্টগ্রাম।

কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের ৪নং গলির একটি দোকানে হিরো ক্রিম (দুগ্ধ জাতীয় খাবার পণ্য) নামে একটি নিম্ন মানের পণ্যের DANO ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করে আসছিলেন অনেকদিন ধরে। অন্যদিকে ফ্রেডস কোম্পানির ইঁদুরে খাওয়া চিড়ার প্যাকেটে পুনরায় লেভেল লাগিয়ে ভালো পণ্য হিসাবে বিক্রি ও প্রদর্শন করার অপরাধে ঐ প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভুক্ত অধিকার।

এর আগে পণ্যের গায়ে লিখা কম মূল্যের উপর পুনরায় অধিক মূল্যে লেভেল লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে নগরীর জিইসি এলাকার কামাল জেনারেল স্টোর একটি দোকানকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সাথে প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করা হয়।

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ আনিছুর রহমান বলেন, ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ে গিয়ে আমার দেখতে পাই- কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের একটি দোকানে হিরো ক্রিম নামে একটি পণ্যের উপর DANO ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও ইঁদুরে খাওয়া চিড়ার প্যাকেট পুনরায় লেভেল লাগিয়ে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করছে তার জন্য ঐ প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। অন্যদিকে, একটি পণ্যের দাম ১৪৫ টাকার উপর ১৫৫ টাকা মূল্য বাসানোর অভিযোগে জিইসি এলাকার কামাল জেনারেল স্টোর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজার জরিমানা করে সতর্কও করা হয়। আমাদের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’

;