মেয়র হানিফের ৭৫ তম জন্মবার্ষিকী আজ

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:10:09

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও স্নেহভাজন, জনতার মঞ্চের রুপকার মোহাম্মদ হানিফ এর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী সোমবার (১ এপ্রিল)। ১৯৪৪ সালের এই দিনে তিনি পুরান ঢাকার মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন আবদুল আজিজ এবং মাতা মুন্নি বেগম এর কনিষ্ঠ সন্তান।

১৯৬৭ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার প্রখ্যাত পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মাজেদ সরদারের কন্যা ফাতেমা খাতুন এর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১ পুত্র ও ২ কন্যার জনক।

শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল। মোহাম্মদ হানিফের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব কাছে থেকেছেন। উদার চিন্তা চেতনা, প্রখর ব্যক্তিত্ব ও সংবেদনশীলতা এবং তার চারিত্রিক গুণাবলীর কারণে তিনি সকলের প্রিয় নেতায় পরিণত হন।

তিনি ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পান। এ সময় ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী কালে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোহাম্মদ হানিফ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোহাম্মদ হানিফকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন। তাই ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঢাকা-১২ আসন ছেড়ে দেন এবং মোহাম্মদ হানিফ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে হুইপেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ৭৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ১৯৯৪ সালে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তারই নেতৃত্বে ৯৬-এর মার্চের শেষ সপ্তাহে ”জনতার মঞ্চ” গঠন করেন যা ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। ৯৬-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন মোহাম্মদ হানিফ।

২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনার ওপর নারকীয় গ্রেনেড হামলার সময় নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানব ঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ হানিফ। একের পর এক ছোড়া গ্রেনেডে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক আহত হন তিনি।

তার মস্তিষ্কসহ দেহের বিভিন্ন অংশে অসংখ্য স্প্রিন্টার ঢুকে পড়ে। দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেই মোহাম্মদ হানিফ জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। ২০০৬ এর ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ব্যাংককে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফিরে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে ৬২ বছর বয়সে ঢাকার এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মোহাম্মদ হানিফের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, মেয়র হানিফ স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ইত্যাদি। তার একমাত্র পুত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পিতার জন্মবার্ষিকীতে দেশবাসীর দোয়া কামনা করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর