চট্টগ্রাম নগরীতে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত বহুতল ভবন ও মার্কেটে ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ সাইনবোর্ড টানিয়ে দিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এই সাইনবোর্ড টানানো ভবন বা মার্কেটগুলো ব্যবহারে সর্বসাধারণকে অতিরিক্ত সর্তক থাকারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শনিবার (৬ এপ্রিল) নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজার, শাহ আমানত মার্কেট, জলসা মার্কেটে অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, নগরীর ভবন ও মার্কেটগুলোর মধ্যে ৯৭ শতাংশ আগুনের ঝুঁকিতে আছে। ৯৩ শতাংশ বহুতল ভবনের কোনো রকম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আইন থাকা সত্ত্বেও ৯৭ শতাংশ ভবন ফায়ার সার্ভিসের বসবাসের উপযোগী ছাড়পত্র নেয়নি।
বহুতল ভবনের পরে চট্টগ্রাম নগরীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বিভিন্ন বস্তি-কলোনি, মার্কেট, শপিং মল ও বিপণী বিতানগুলো। আগুনের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি এই ধরণের জনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি তালিকা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) হিসেবে, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় সাত হাজারের মতো বহুতল ভবন আছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ভবন আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভবনগুলো সবচেয়ে বেশি আগুনের ঝুঁকিতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয় সিডিএ। অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও নেই অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলোর বাসিন্দাদের। সেই হিসেবে বলতে গেলে, শতভাগ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত ভবন একটিও নেই চট্টগ্রামে।’
তিনি জানান, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুযায়ী ছয় তলার বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করতে হলে তিন স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর নিচে হলে দুই স্তরের অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তবে এর আগে ফায়ার ফাইটিং পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবনের স্থায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, ফায়ার লিফট, ফায়ার কমান্ড স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এরপর ফায়ার সার্ভিস সেখানে বসবাসের জন্য ছাড়পত্র দেবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ছাড়পত্র পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটির তত্ত্বাবধানে ২০ শতাংশ বসবাসকারীকে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। দুই বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস পর পর ও এরপর থেকে ছয় মাস পর পর ভবনে ফায়ার মহড়ার আয়োজন করতে হবে।
নগরীর চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা নিউটন দাশ বার্তা২৪.কম-কে জানান, শনিবার থেকে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে চট্টগ্রামের অগ্নি-ঝুকিপূর্ণ ভবণগুলোতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো ভবন ও মার্কেটে সর্তকতামূলক এই সাইনবোর্ড লাগানো হবে।