সপ্তাহজুড়ে তীব্র তাপদাহে রাজশাহীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, রাজশাহী, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 17:48:23

চলতি এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে নাকাল হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। মাঝারি, মৃদু তাপপ্রবাহ থেকে রোববার (২৮ এপ্রিল) শুরু হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। সোমবার (২৯ এপ্রিল) তা উঠে ৪২ ডিগ্রিতে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজশাহীর তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুস সালাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, গতকালের (সোমবার) চেয়ে আজ তাপমাত্রা কিছুটা কম। বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতাও বেড়েছে। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে- আরও তিন থেকে চারদিন রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে ৩৯ থেকে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকতে পারে। আর যদি দ্রুত বৃষ্টিপাত না হয়, তবে তাপমাত্রায় আগের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, সপ্তাহজুড়ে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আগুনমুখো রোদ আর ভ্যাপসা গরমে হাঁস-ফাঁস করছে প্রাণিকুল। ঘরে-বাইরে কোথাও মিলছে না স্বস্তি। স্কুলগামী শিশুরা গরমে হাঁফিয়ে উঠছে। খাবার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় একটু অসচেতন হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

তীব্র গরমে রাজশাহীর সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি ক্লিনিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এই তালিকায় বেশি রয়েছে শিশু, নারী ও শ্রমজীবী মানুষ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, শিশু বিভাগের তিনটি ওয়ার্ড ও মেডিসিনের চারটি ওয়ার্ডে সর্বত্রই ডায়রিয়ার রোগী। হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় তিল ধারণের জায়গা নেই।

মেডিসিনের চারটি ইউনিটে নারী-পুরুষ মিলে সহস্রাধিক রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের মধ্যে ডায়রিয়া ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও হাঁপানি ও স্ট্রোকের রোগী রয়েছেন। শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ রোগী রামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা যায়।

হাসপাতালে রেজিস্ট্রির দায়িত্বে থাকা দুই জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) থেকে ডায়রিয়ার রোগী বাড়তে থাকে। আজ (৩০ এপ্রিল) অন্তত ৪৫০ রোগী রয়েছে শুধু ডায়রিয়ার। এছাড়া নিয়মিত সময়ে মেডিসিন বিভাগে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী পাওয়া যায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে এই বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বিভিন্ন বয়সী মানুষ চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রায় দুই শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আল জাজিরা।

একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে- জেলার চারঘাট, পুঠিয়া, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী, পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সেও। এছাড়া বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতেও বেড়েছে ডায়রিয়া ও হিটস্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা।

রামেক-এর মেঝেতে চলছে চিকিৎসা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুর রহমান খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত রোগ ও হিট স্ট্রোকে। সুস্থ থাকতে এ সময়ে বাইরের বিভিন্ন খাবার ও পানি জাতীয় শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাসায় খাবার ও শরবত বানিয়ে খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে।’

রামেক শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইউনিট প্রধান ডা. শাহিদা জানান, গরমে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, ভাইরাল টি-বার, পক্স এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের এ সময় শিশুদের নিয়ে বাড়তি সচেতন থাকতে হবে। রোদে প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের বের হতে দেওয়া যাবে না বাইরে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। শিশুদের বাইরে বিভিন্ন খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। আক্রান্ত হলে দেরি না করে সাথে সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর