উপকূলে লাল পতাকা, বইছে দমকা বাতাস

খুলনা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, খুলনা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 18:59:13

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আতঙ্ক বাড়ছে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে। উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ সংকেতের লাল পতাকা লাগানো হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করতে চলছে মাইকিং। দমকা বাতাসের সাথে খুলনায় বৃষ্টি শুরুও হয়েছে।

শুক্রবার (৩ মে) সরেজমিনে খুলনার উপকূলীয় এলাকা দাকোপের পানখালি ও ঝপঝপিয়া নদীর আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে শুরু হয়েছে মাইকিং। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

সিপিপি ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রতিটি বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ইতোমধ্যে, খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালি ইউনিয়নের ভদ্রা নদীতে পানির চাপে ১নং গেটের পাটাতন ভেঙে বিলে পানি প্রবেশ করেছে।

এছাড়া ঝপঝপিয়া নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরিঘাটের পল্টুন ডুবে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হবার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পাড় হওয়া যাত্রীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, আর দুই ফুট পানি বাড়লেই এ পথে আর যাতায়াত করা যাবে না। এছাড়া বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দাকোপের পানখালি সেতু বন্ধ আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দক্ষিণের তিন উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রার প্রায় সব নদীতে পানির চাপ বাড়ছে। একই সাথে বাতাসের বেগও বাড়ছে।

বিশুদ্ধ পানি বহনকারী ভ্যানচালক করিম মিয়া বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উপজেলা থেকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকার মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝড়ের পরে যাতে সবাই বিশুদ্ধ পানি পান, সেজন্য এ ব্যবস্থা।’

উপকূলে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

এতসব আয়োজনের পরেও এখনো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। উপজেলা প্রশাসন ও সিপিপির সদস্যরা স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলেও তারা আবার ফিরে আসছেন।

দাকোপ পানখালীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দা রমা রানী বলেন, ‘আমার ঘরের লোক ধান কাটতি গোপালগঞ্জ গেসে। সে না ফিরলি কোথাও যাব না। ঘরে মাল জিনিস আছে। সে না আসলি কেমনে নেবো। আমরা এটুক বাতাসে অভ্যস্ত হয়ে গেসি। এখন আর ডর করে না।’

দাকোপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন। দুযোর্গ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবে শুকনো খাবার, টিআর চাউল, নগর অর্থ ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে।‘

উল্লেখ্য, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে ( ৩ মে, দুপুর ১২টা) বলা হয়েছে, প্রবল ঘুর্ণিঝড় ফণী উড়িষ্যার উপকূল (পুরীর কাছ দিয়ে) অতিক্রম করছে। মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিলো।

ফণী আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ৩ মে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিমি যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর