রাজশাহী-চাঁপাইয়ের আমচাষিদের 'আশীর্বাদ' ফণী

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব (রাজশাহী), তারেক রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), বার্তা২৪.কম | 2023-08-18 05:01:50

সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। গত ১ মে ঘূর্ণিঝড়টির অবস্থান এবং তার গতিপথ অনুযায়ী শনিবার (৪ মে) রাজশাহী অঞ্চলে ফণীর কেন্দ্রে থাকতে পারে বলে তথ্য দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর।

এটিকে সুপার সাইক্লোন বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল- রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়টি বয়ে যেতে পারে। যা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন দেশের আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা।

তবে গতিপথ বদল করে শনিবার দুপুরে ফণী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এড়িয়ে সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। আর রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুক্রবার (৩ মে) বিকেল থেকে শনিবার (৪ মে) দুপুর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে প্রায় ৬৭ মিলিমিটার।

ফলে ফণীর কারণে আমচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির শঙ্কা কেটে গেছে। বরং ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা এই অঞ্চলের প্রধান ফসল আমের জন্য আর্শীবাদ বয়ে নিয়ে এসেছে।

আমচাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন- এপ্রিলের শেষ সপ্তাহজুড়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দাবদাহে আমে ব্যাপকভাবে বালাইয়ের উপদ্রব শুরু হয়। বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ারও ব্যাপক শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। তবে ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা আমের জন্য ব্যাপক উপকারী।

রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকার আমচাষি সাইদুর রহমান বলেন, ‘ফণী ঝড় নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমের ভরা মৌসুমে ঝড় হলে ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে ঝড় না আসলেও যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ব্যাপক উপকার হয়েছে। এই বৃষ্টিতে আম দ্রুত বড় হবে এবং তাড়াতাড়ি বাগান থেকে নামানো যাবে। বাজারে ভালো দামে বিক্রি হবে।’

রাজশাহীর মোহনপুর, বাঘা, চারঘাটের বেশ কয়েকজন আমচাষিও বৃষ্টিতে খুশি বলে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন। তারা জানান, ঝড়ের প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা খুব দরকার ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে বাগানে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ টহল করায় তারা স্প্রে করতে পারছিল না। তবে বৃষ্টির কারণে এখন আর স্প্রে করারও প্রয়োজন পড়বে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি ও বিদেশে আম রফতানিকারক ইসমাঈল হোসেন খান শামিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হতো। এনিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কেটেছে সবার। তবে কোনো রকম ঝড় ছাড়াই ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এখন স্বস্তিতে জেলার আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক সবাই।’

ভোলাহাট উপজেলার আমচাষি আবদুস সাত্তার জানান, মুকুল আসার পর হতেই বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পাম্পের মাধ্যমে বাগানে পানি দিতে হয়েছে। সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পানি না পাওয়ায় আম বড় হচ্ছিলো না। ফলে সময় মত আম নামানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এই বৃষ্টি সেই দুশ্চিন্তা দূর করে দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ফণীর প্রভাবে শুধু বৃষ্টি হওয়ায় এটি আমের জন্য আশীর্বাদ। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় আমে রোগ-বালাই দেখা দিয়েছিল। বৃষ্টি হওয়ায় এখন আম দ্রুত বড় হবে এবং ঝরে পড়বেনা।’

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ফণীর প্রভাবে যে বৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমের ‘বাড়-বাড়ন্ত’ বেশি হবে। বাগানের যে আমগুলো একমাস পরে বাজারজাত করা যেত, তা এখন অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন আগে নামানো যাবে। এতে আমচাষিরা একদিকে ভালো দাম পাবেন, অন্যদিকে ভোক্তারা বাজারে পুষ্ট ও সুস্বাদু আম পাবেন।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর রাজশাহীতে রেকর্ড ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর