জুলাইয়ে আসছে ই-পাসপোর্ট, প্রস্তুত শাহজালাল বিমানবন্দরও

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 20:08:00

সেবাখাতে দিন দিন প্রযুক্তিগত নানা পরিবর্তন নিয়ে আসছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে আসছে ই-পাসপোর্ট। এতে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট অর্থাৎ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের দিন শেষ হয়ে আসছে। ১ জুলাই থেকে নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট করতে গেলেই পাওয়া যাবে ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট। পাসপোর্ট বিতরণ নিয়ে এরেই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পাসপোর্ট অধিদফতর।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ই-পাসপোর্ট দেওয়া নিয়ে আর কোনো জটিলতা নেই। ১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। ওইদিন থেকেই সকল নাগরিকের হাতে তুলে দেওয়া হবে পাসপোর্টটি।   

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে ই-পাসপোর্ট  রিড করার জন্য গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হলে এই গেটে ই-পাসপোর্টধারীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ (এসপি) শাহরিয়ার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের ইমিগ্রেশনে আগে থেকে ই-পাসপোর্ট রিডার আছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য আমাদের ইমিগ্রেশনে ই-পাসপোর্ট রিডার আছে। এখন দেশের ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের আন্ডারে ডিপার্চারে তিনটা গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১ জুলাই থেকে দেশের ই-পাসপোর্টধারীদের ইমিগ্রেশন এই গেটে করা হবে।

জানা যায়, তিন ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে ই-পাসপোর্টে। এর জন্য আলাদা আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি, ১০ বছর মেয়াদি এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি।  পাঁচ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, যা ২১ দিনে সরবরাহ করা হবে। জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৫ হাজার টাকা, যা এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। অতি জরুরির জন্য ৭ হাজার ৫০০ টাকা, যা একদিনে সরবরাহ করা হবে।

দশ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য ফি ৫ হাজার টাকা, যা ২১ দিনে সরবরাহ করা হবে। জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৭ হাজার টাকা, যা এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া যাবে। অতি জরুরির জন্য ৯ হাজার টাকা, যা একদিনে সরবরাহ করা হবে।

অন্যদিকে ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের দেওয়া হবে পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট। তবে ই-পাসপোর্টের ফি এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

বিশ্বের ১১৯টি দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়। এতদিন পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন মেশিন দিয়ে পাঠ করা হত, এখন ই-পাসপোর্টের ডাটা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ডাটা বেইসেও থাকবে।

পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ই- পাসপোর্ট প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ১ জুলাই থেকে ই-পাসপোর্ট নাগরিকদের সরবরাহ করা হচ্ছে।  এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। প্রথমে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও দুই কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট হবে। এরজন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে।

বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে ব্যক্তির তথ্যসংবলিত যে দুটি পাতা আছে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না।

অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর (মোবাইলের মেমোরি কার্ডের মতো) চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। এছাড়া ই-পাসপোর্টে মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে।

পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র আরও জানায়, ই-পাসপোর্ট চালু হলেই এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হবে না। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট দেওয়া হবে না। যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে তারা রিনিউ করতে গেলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর