ডিজির শ্যালিকা, ভাতিজা, ভাগিনা, ভাগ্নিতে ভরপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 23:28:03

ইসলামিক ফাউন্ডেশন ডিজির শ্যালিকা, ভাতিজা, ভাতিজা বৌ, ভাগিনা ও ভাগ্নি প্রায় সবাই এখন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। ২১ জন নিকটাত্মীয়কে নিয়োগ দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের বিরুদ্ধে।

২০০৯ সালে যোগদানের পর নানা অনিয়মের মাধ্যমে এসব নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি যখন ডিজি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন ইসলামিক ফাউন্ডেশনে তার একমাত্র আত্মীয় ছিল ভায়েরা ভাই সৈয়দ শাহ এমরান (সহকারী পরিচালক) হিসেবে কর্মরত ছিল। এখন তার চারপাশে অনেক নিকটাত্মীয়।

আরওপড়ুন: ইফা ডিজি অফিস থেকে ফাইল সরানোর চেষ্টা করেছেন: ধর্ম প্রতিমন্ত্রী

আপন বোনের মেয়ে ফাহমিদা বেগম (সহকারী পরিচালক, কক্সবাজার জেলায় উপ-পরিচালক পদে কর্মরত) আরেক বোনের মেয়ে সিরাজুম মুনীরা (মহিলা কো-অর্ডিনেটর, বায়তুল মোকাররম) বোনের ছেলে মাওলানা এহসানুল হক ( জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের পেশ ইমাম), আপন ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (সহকারী পরিচালক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি), ভাইয়ের ছেলে মোঃ শাহ আলম (উৎপাদন ব্যবস্থাপক, চট্রগ্রাম) আরেক ভাইয়ের ছেলে মোঃ রেজোয়ানুল হক (প্রকাশনা কর্মকর্তা) আরেক ভাইয়ের ছেলে মোঃ মিসবাহ উদ্দিন (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, ৫৬০ মডেল মসজিদ প্রকল্প), শ্যালিকা ফারজিমা মিজান শরমীন (আর্টিস্ট, প্রেস), শ্যালিকার ছেলে মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (সহকারী পরিচালক, প্রসাশন), বন্ধুর মেয়ে সৈয়দ সাবিহা ইসলামকে (সহকারী পরিচালক, প্রসাশন)।

আত্মীয় আবদুল্লাহ আল মামুন (সহকারী পরিচালক, উৎপাদন), আত্মীয় ইলিয়াস পারভেজ (সহকারী পরিচালক, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প) ডিজির ছেলে অনিকের গৃহশিক্ষক আতিয়ার রহমানকে প্রোগ্রাম অফিসার (ইসলামি মিশন) পদে নিয়োগ প্রদান করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই পদগুলো সবগুলোই প্রথম শ্রেণির পদ।

এছাড়া আপন ভাইয়ের ছেলে মো. রাসেল মিয়াকে ইসলামিক মিশনের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান পদে, আরেক ভাইয়ের ছেলে মুনিম ও মাহমুদকে এলডিএ পদে, মাহমুদের স্ত্রীকে ল্যাব টেকনিশিয়ান, আত্মীয় রতনকে ফিল্ড সুপারভাইজার, হিসাব রক্ষক পদে ফরসালকে, ইউডিএ হিসেবে আনোয়ারুল আজিম, গবেষণা সহকারী পদে আনোয়ারুল হককে নিয়োগ প্রদান করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির পদত্যাগ চান পরিচালকরাও

শুধু আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি। বন্ধু এমনকি বান্ধবীদের ছেলে-মেয়ে স্ত্রীরাও বাদ যাননি আত্মীয়করণ থেকে। ঘনিষ্ঠ পরিচালক মু. হারুনুর রশিদের ছেলে নাজমুস সাকিবকে সহকারী লাইব্রেরীয়ান পদে, পরিচালক তাহের হোসেনের স্ত্রীর বোনের মেয়ে সাহিনা আক্তারকে সহকারী পরিচালক পদে, পীরভাই জালাল আহমদের স্ত্রী মিসেস মাহমুদা বেগমকে প্রোগ্রাম অফিসার পদে, ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পরিচালক এবিএম শফিকুল ইসলামের আত্মীয় হোমায়রা আক্তারকে পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ প্রদান করেন।

ইফা ডিজির বিরুদ্ধে লেখক সম্মানি নিয়ে নয়-ছয়, কেনাকাটার টাকা লুটপাটসহ, পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও জ্যৈষ্ঠতা লংঘন এবং নিয়োগ-বদলির ক্ষেত্রে নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

ফাউন্ডেশনে দৈনিক ভিত্তিতে চাকুরি দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে দৈনিক ভিত্তিতে ছয় শতাধিক কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

এভাবে দৈনিকভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে পরে তাদেরকে নিয়মিতকরণ করা হয়। এখনও প্রায় দুই থেকে আড়াই শ’ কর্মচারী দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন।

ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন

ইফা ডিজি নারিন্দা মশুরীখোলা দরবারের পীর শাহ মোহাম্মদ আহছানুজ্জামানকে ‘বোগদাদী কায়দা’র রয়্যালিটি বাবদ অবৈধভাবে ১৪ লাখ দিয়েছেন। কারণ, ‘বোগদাদী কায়দা’ সুপ্রাচীন কাল থেকে এই উপমহাদেশে কোরআন শরিফ শেখার জন্য পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এটার লেখক শাহ আহসানুজ্জামান নয়। অথচ ডিজি তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাধে শাহ আহছানুজ্জামানকে এ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এভাবে অন্যের দ্বারা বই লিখিয়ে লাখ লাখ টাকা রয়্যালিটি গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে ডিজির বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের আগে তার নিজ নামে কোনো বই ছিলো না। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১০ বছরে ২৫টির অধিক বই তার নামে ছাপা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একটি বইও ডিজি নিজে লেখেননি।

এ ছাড়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কর্মসূচিতে ২০২০ জন শিক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগে দুর্নীতি ও আর্থিক লেনদেন, ইসলামিক মিশনের টিএ-ডিএ খাতে অনিয়ম, ৫৬০টি মডেল মসজিদের সাইনবোর্ড তৈরিতে কমিশন বাণিজ্য, আইন উপদেষ্টা পদে বেআইনি নিয়োগসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এসব কারণে খোদ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অচলাবস্থা কাটাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীও তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ১৮ জুন। এদিন তিনি অফিস না করে ৩ দিনের ছুটির দরখাস্ত পাঠিয়েছেন ফাউন্ডেশনে। যদিও এই ছুটির আবেদন যথাযথ হয়নি বলে জানিয়েছেন ফাউন্ডেশন সচিব।

এ বিষয়ে কথা বলতে ডিজির মোবাইলে একাধিকবার কল ও এসএমএস দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর