সুন্দরবনকে ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকাভুক্তির সুপারিশ ইউনেস্কোর

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 03:52:25

বন রক্ষায় বাংলাদেশের কৃতকাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় দেশের জাতীয় গর্ব, সম্পদ ও নিরাপত্তা বর্ম সুন্দরবনকে ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাপা‘র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।

একইসঙ্গে সুন্দরবন তার বর্তমান ‘ঐতিহ্যে’র সম্মানও হারাতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

শুক্রবার (২৮ জুন) বেলা ১১টায় প্রেসক্লাবে ‘সুন্দরবন সুরক্ষায় ইউনেস্কোর সর্বশেষ সুপারিশ, বনের প্রতি সরকারের অবহেলা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব জানান।

সুলতানা কামাল বলেন, ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রে’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সুন্দরবন বিষয়ে একটি সুপারিশ প্রস্তুত করেছে যা আসন্ন ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি’র সভায় পেশ করা হবে। ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ বন রক্ষায় বাংলাদেশের কৃতকাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় আমাদের জাতীয় গর্ব, সম্পদ ও নিরাপত্তা বর্ম সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর ‘বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছে। এই সভা আগামী ৩০ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত আজেরবাইজানের রাজধানী ‘বাকু’ শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজেরবাইজানের সেই সভায় বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের সুপারিশ সমূহের উপর আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে। সুন্দরবন বিষয়ে ’কেন্দ্রের’ সুপারিশ যদি ’কমিটি’ চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ, করে তাহলে সুন্দরবন তার বর্তমান‘ঐতিহ্যে’র সম্মান হারাবে। অর্থাৎ সম্মান হারাবে বাংলাশে, সারা বিশ্বে দেশ ও জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এটি একটি বড় অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, লজ্জাষ্কর ও অপমানকর বিষয় হিসেবে পরিগণিত হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নির্বিকার হলে, তার উপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে বনকে ‘বিপদাপন্ন তালিকাভুক্ত’ করার ইউনেস্কোর একটি পদ্ধতি রয়েছে, সুন্দরবন বিষয়ে তারা সেটিই গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন এলাকা তথা সারা দেশের পরিবেশ সংরক্ষণের বৃহত্তর বিবেচনায়, আমরা মনে করি ইউনেস্কো কেন্দ্র সঠিকভাবেই তাদের এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। সরকার যেহেতু সুন্দরবন ও পরিবেশের প্রতি যত্নশীল নয়, সেক্ষেত্রে বন রক্ষায় আমরা ইউনেস্কোর এই পদক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি।

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, সুন্দরবন এলাকায় উন্নয়নের নামে ধ্বংস চলছে। আমরা সবাই উন্নয়ন চাই, তাই বলে পরিবেশ ধ্বংস করে, বন ধ্বংস করে সে প্রকল্প চাই না। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন শুধু বাংলাদেশের আন্দোলন নয়, এটি ভারতসহ সারা বিশ্বের পরিবেশ সংরক্ষণবাদী ও সর্বস্তরের জনগনের আন্দোলন।

সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’র সদস্য এ.বি. এম. শামসুল হুদা, রুহীন হোসেন প্রিন্সসহ পরিবেশবাদী অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও পরিবেশবিদগণ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নদী বিনষ্টকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, জলোচ্ছ্বাস, চিংড়ি চাষ ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা, পশু শিকার, গাছকাটা, প্রাণী বিলুপ্তি, নৌ-পথ অব্যবস্থাপনা, জাহাজ ডুবি, অপরিকল্পিত পোল্ডার ও মাছ শিকার, জনপদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংকট ও ধ্বংসাত্বক উন্নয়ন ও বন দখলে সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে। সুন্দরবনের পাশ ঘেঁষে নির্মিয়মান ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিতর্কিত, গণনিন্দিত ভয়ংকর রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। গণমাধ্যম সূত্রে বনের পাশেই ফার্নেস তেল ভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন, বনের কাছে বিমানবন্দর, ইপিজেড আদলের শিল্পায়ন পরিকল্পনা জাতীয় তথ্যও আমরা জেনেছি। বনের পাশ ঘিরে ১৫০টি শিল্প প্লট প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও বনের ভেতরে বা পাশেই তৈরি হয়েছে সিমেন্ট কারখানা, সাইলো গুদাম। এমনকি প্রভাবশালী রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তি বনের ভেতরে বা পাশে জমি ক্রয় করে ব্যক্তি মালিকানার সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। বনের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে সরকারি মোবাইল ফোনের টাওয়ার, যা বিশেষ করে গাছ ও প্রাণিকুলের প্রজননক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর