রংপুরই হোক এরশাদের শেষ ঠিকানা

ঢাকা, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-30 10:07:18

‘হামার ছাওয়া মরি গেইচে, আল্লায় তার ভালো করুক। সারা জীবন তায় হামার ঘরের ছাওয়া হিসেবে কাছোত আছিলো। ভোট করছে। সোগ সময় লাঙ্গল নিয়্যা জিতিছে। এ্যালা জীবনের শেষ সময় ক্যানে তায় হামার বাইরোত থাকপে।  রংপুর যেমন তার ঠিকানা আছিলো, মরিয়াও যেন শেষ ঠিকানাটা রংপুরই হয়।’ বার্তা২৪.কম’র কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এরশাদভক্ত তফেল উদ্দিন।

রোববার (১৪ জুলাই) সাবেক রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন এরশাদভক্ত তফেল। গুরুতর অসুস্থ হয়ে সিএমইচে ভর্তির পর থেকে শতবর্ষী এই বৃদ্ধ কখনো টেলিভিশনের পর্দায় নতুবা পত্রিকা দেখে এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেন। তার চাওয়া প্রিয় নেতা এরশাদের কবর রংপুরেই হোক।

আরও পড়ুন: জাতীয় ফ্রন্ট থেকে এরশাদের জাপা

মৃত্যুর পর সাবেক এই রাষ্ট্রপতির সমাধি কোথায় হবে?-এ নিয়ে দলে- দলের বাইরে বিভিন্ন স্থানে হয়েছে নানা আলোচনা। তবে রংপুরবাসীর দাবি, রংপুরের এ সন্তানের কবর রংপুরেই হোক।

বৃদ্ধ তফেল উদ্দিনের মতই আরেক এরশাদভক্ত সাজ্জাদ হোসেন। পেশায় তিনি রিকশাচালক। সাজ্জাদ হোসেন আক্ষেপ নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সারা জীবন এরশাদ সাইবোক ভোট দিনো। দুনিয়ার মানুষ জানে এরশাদ সাইব রংপুরের ছাওয়া।এ্যালা শোনোছি তায় মরি গেইলে নাকি রংপুরের বাইরোত তার কবর হইবে। মুই চাও রংপুরের মাটিতে তার জাগা হোউক।’

এরশাদ ভক্তদের মতো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও চাইছেন রংপুরেই তাদের নেতার সমাধি করা হোক। জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন সুমন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘এরশাদ স্যারের পরিবারের বেশির ভাগই রংপুরে শায়িত আছেন। তার প্রতি রংপুরের মানুষের আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। যা কোনদিনই শোধ করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, স্যারের সমাধি রংপুরে করা হোক। রংপুরের মানুষ যেন তার সমাধিতে ফুল দিতে পারে।’

আরও পড়ুন: এরশাদ মারা গেছেন

মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নব্বইয়ে সরকার পতনের পর এরশাদ স্যার জেলে বন্দি হয়েছিলেন। রংপুর থেকেই তার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রংপুরের মানুষই তাকে ভোট দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য এরশাদ স্যারের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের কোন ঘাটতি নেই। তাই দলের সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য রংপুরের মাটিতেই এরশাদ স্যারের সমাধি করা উচিত।’

জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে হলে এরশাদের সমাধি রংপুরে করাটা বেশি জরুরি বলে মানছেন রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন। বার্তা২৪.কম-কে তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের সমাধি তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়াতে। সেখানকার মানুষরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন আগলে রেখেছেন, আমরাও আমাদের নেতাকে আগলে রাখব। এরশাদ স্যারের সমাধি তার মা-বাবার পাশে হোক এটা রংপুরের মানুষের দাবি।’ 

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি স্যারের সমাধি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য রংপুরে ২ একর জমি দিতে চেয়েছি। দলীয় সভায় তা উপস্থাপনও করেছি। জাতীয় পার্টির অনেকেই স্যারের সমাধির জায়গার জন্য জমি দিতে চেয়েছেন।’

এদিকে রংপুরে থাকা সাবেক রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের দাবি, ঢাকায় নয় রংপুরে মা-বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

রোববার (১৪ জুলাই) সকাল পৌনে ৮ টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

আরও পড়ুন:  এরশাদের দাফন ঢাকায়!

৪ স্থানে এরশাদের জানাজা

এরশাদের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর