সাইবার অপরাধের বড় প্লাটফর্ম পর্নোগ্রাফি সাইট

, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 01:51:45

প্রতিনিয়ত মানুষের আসক্তি বাড়ছে ফেসবুক, টুইটার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাাপ ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি। সাইবার অপরাধের ব্যাপ্তিও তাই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই অপরাধের বড় প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইট এবং ইউটিউব।

কাউকে হয়রানি, কটুক্তি, অশালীন ভিডিও এমনকি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হচ্ছে ইউটিউব থেকে। কপিরাইট নীতিমালার সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকায় একজনের সম্পদ অন্যজন ব্যবহার করছে নির্দ্বিধায়।

তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে, গোপনে ধারণ করা তরুণীদেরকে নিয়ে নানা রকম ভিডিও এবং ছবি। সেগুলো আবার বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটে আপলোড করা হচ্ছে। এডিটিং করে গলাকাটা এই সব ভিডিওগুলোর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। তবে যেভাবেই হোক, সামাজিকভাবে ঘৃণার শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগী তরুণী এবং তার পরিবার।

সম্প্রতি রাজনৈতিক কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একজন ছাত্রীর ছবি বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইটে দেখা যায়। বুঝতে একটুও কষ্ট হয়না যে এটা এডিট করা। এই বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, এই ঘটনা যে একজন মেয়ের কাছে কত বড় কষ্ট, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়! সবাই জানেন এই সব এডিট করা যায়, তবুও মানুষ আড়চোখে তাকায়।

এদিকে এ সংক্রান্ত অভিযোগে পুলিশের গ্রেফতারের হারও নেহাত কম নয়। ২০১৭ সালে এসব অভিযোগে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপি। তাছাড়া চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আরও ৪০ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জাতীয় সংসদে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাইবার অপরাধীদের শিকার ৫২২ জনকে নিয়ে পুলিশের এক গবেষণায় দেখা যায়, ভুক্তভোগীদের ৭০ শতাংশই নারী। তাদের মধ্যে ২৫ বছরের কমবয়সী নারীর সংখ্যা ৫৭ শতাংশ।

সাইবার অপরাধ এবং প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, শতকরা প্রায় ৫২ ভাগ অভিযোগই আসে নারীদের থেকে৷ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। শতাংশের হিসাবে যা প্রায় ৭৪ শতাংশ। অভিযোগের একটি বড় অংশের অভিযোগ ফেসবুক আর ইউটিউব সংক্রান্ত৷ যার মধ্যে আইডি হ্যাক থেকে শুরু করে সুপার ইম্পোজ ছবি এবং পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ অভিযোগও রয়েছে৷

ভুক্তভোগীরা আইনি ব্যবস্থা নিতে ভয় পায় উল্লেখ করে এই প্রতিষ্ঠানটি বলেন, সাইবার হামলার শিকার বেশি নারীরা ৫২% অভিযোগ নারীদের থেকে ৩০% নারী জানেনা কীভাবে আইনি ব্যবস্থা নিতে হয়, ৭৪% নারীদের বয়স ১৮-৩০ বছরের মধ্যে আর ২৫% নারী মনে করে অভিযোগ করে লাভ হবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ও সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট সূত্রটি জানায়, শুধু ২০১৭ সালে রাজধানীতে পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে অন্তত ৪০ হাজার। এ অভিযোগগুলোর মধ্যে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপসের মাধ্যমেই শুধু অভিযোগ এসেছে ৫ হাজার ৮৪২টি।

দেশে গেলো ৫ বছরে সাইবার অপরাধে মামলা হয়েছে, ১৫শ'র কাছাকাছি । ২০১২ সালে ১৯ টি, ২০১৩ সালে ৪৮টি, ২০১৪ সালে ১৪৯টি, ২০১৫ সালে ৩০৩ টি, ২০১৬ সালে ৫৪৬টি , ২০১৭ সালে ৩৫২টি।

গেলো সপ্তাহে এমন আর একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসে। রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্রী 'মিম'। তার নামে ইউটিউবে একটি আইডি আছে, সেখানে নিয়মিত অশালীন ভিডিও ছাড়া হয়, সেটা আবার তার নামেই ভুয়া ফেসবুক আইডি শেয়ার করা হয়। পরে ভুয়া আইডি সাথে যোগাযোগ করে ভয়ভীতি দেখালে, উল্টো টাকা দাবি করে অপরাধী চক্র। বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে সমস্যা সমাধান হলেও, এখনও আতঙ্কে থাকেন মিম।

অন্যদিকে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে সবার আগে, পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের বিভিন্ন দিক গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

এই অপরাধ বিশ্লেষক আরও বলেন, সাইবার অপরাধ বিষয়ে প্রশাসন পর্যায়ে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে, তাহলেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর