‘খাইট্টা লিবেন নাকি মামা, তেঁতুলের খাইট্টা’

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 22:59:08

‘খাইট্টা লিবেন নাকি মামা… খাইট্টা? তেঁতুল গাছের খাইট্টা। মাংসা কাটা খাইট্টা। গরু-মহিষ-খাসি কাইটবে জবর, খাইট্টা; খাইট্টাই থ্যাকে যাবে… লিয়ে লেন একখান খাইট্টা।’

শুক্রবার (০৯ আগস্ট) বেলা ১০টার দিকে রাজশাহী নগীর শালবাগান এলাকায় এভাবেই হাঁকডাক ছেড়ে রাস্তার ধারে মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত কাঠের গুঁড়ি (খাইট্টা) বিক্রি করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী সাইজুদ্দীন আলী। পরিচিত এক ব্যক্তির আমের আড়তের সামনে রাস্তার ধারে ৫০/৬০টি মাংস কাটার উপযোগি কাঠের গুঁড়ি নিয়ে হাঁকডাক ছেড়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের চেষ্টা করছেন তিনি।

জানালেন- পেশায় তিনি রিকশা চালক। ভাড়ার রিকশা চালান। তবে প্রতিবছর কোরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে তিনি মাংস কাটার কাঠের গুঁড়ি বিক্রির ব্যবসা করেন। ভালো লাভও হয়। যা দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আনন্দে কাটে তার ঈদ।

ব্যবসায়ী সাইজুদ্দীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বানেশ্বর ও পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া গ্রাম থেকে দুটো মাঝারি সাইজের তেঁতুল গাছ কিনেছি। দুই গাছের গুড়ি স-মিল (কাঠ কাটার) ফাঁড়াই করে ৬৫/৭০ খান খাইট্টা হয়েছে। গত দুই দিনে ১০/১২ খান বিক্রি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে যেসব ক্রেতা আসে, তারা বাছাই করে ভালো খাইট্টা নিয়ে যায়। তাই দামও প্রথম দিকে বেশি। ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। আরও ২০ খান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বেচার চেষ্টা করবো। তারপর শেষ দিকে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় সব ছেড়ে দেবো।’

কোরবানির ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি। রাজশাহী নগরীর মানুষের পশু কিনে রাখার জায়গার খুব একটা অভাব না হওয়ায় অধিকাংশ মানুষই পশু কিনে ফেলেছেন। যারা পশু কিনেছেন, তারা এখন নগরী ঘুরে ঘুরে কিনছেন মাংস কাটার দা, ছুরি, বটি, কাঠের গুঁড়ি (খাইট্টা), খেঁজুর পাতার পাটিসহ পশু কোরবানির কাজ সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি।

রাজশাহী নগরীর ঘুরে দেখা যায়, শালবাগান, ডিঙ্গডোবা, কোর্টস্টেশন, বিনোদপুর বাজার, সাহেবাবজার মাস্টারপাড়া, তেরখাদিয়া স্টেডিয়াম এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্রি হচ্ছে গাছের গুঁড়ি। স্থানীয় ভাষায় যাকে খাইট্টা বলা হয়।

কেউ কেউ পিস হিসেবে আবার কেউবা কেজি দরে বিক্রি করছে মাংস কাটার উপযোগী কাঠের গুঁড়ি। পিস হিসেবে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দামে এই গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে। আর কেজি দরে হলে প্রতিকেজি ২২ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতারা।

শালবাগানে খাইট্টা কিনতে আসা কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা মোজাফফর আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য খাইট্ট তো লাগবেই। গরু কিনেছি। এখন তা কাটার জন্য যা যা লাগে তা কিনতে বেরিয়েছি। আগেভাগে কিনে রাখা ভালো। অনেক জায়গায় খাইট্টে দেখলাম, তবে শালবাগান মোড়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেশ চড়া চাইছে বিক্রেতারা।’

নগরীর মাস্টারপাড়া সবজি বাজারের পাশে গুঁড়ি বিক্রি করছেন রায়হান আলী, শোয়েব হোসেন ও লুৎফর রহমান। তারা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, এখনও বিক্রি সেভাবে জমেনি। ঈদের আগের দিন এবং ওই দিন রাতে বেশি মানুষ খাইট্ট কিনতে আসে। তবে শেষমেষ বিক্রি না হলে মূলধনটা আটকে থাকে সারাবছর। এজন্য আগেভাগে তারা কমমূল্যে হলেও বিক্রি করতে শুরু করেন।

তারা আরও জানান, তেঁতুল গাছ এখন পাওয়া মুশকিল। গ্রামে গ্রামে গিয়ে এক মাস আগে থেকেই খোঁজ নিতে হয়। তাই শুধু গাছ কত দিয়ে কিনলাম সেই হিসেবে গুঁড়ি বেঁচলে লাভ থাকে না। এলাকায় গিয়ে ঘোরাঘুরি গাড়ি ভাড়া ও শ্রম অনেক বেশি যায়। যে দামে এবার তারা গাছ কিনেছে, তাতে ৫০০ টাকা দরে খাইট্টা বিক্রি করতে পারলে লাভ থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর