ক্রেতা থাকলেও নেই বিক্রি, লোকসানের আশঙ্কা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 18:27:13

কাল বাদে পরশু কোরবানি ঈদ। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহী সিটি হাটে গরু-মহিষ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে পা ফেলা দায়। অথচ হাটে কেনাবেচা একেবারেই কম।

ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশি চাওয়ায় তারা শেষ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন, আজ (শনিবার- ১০ আগস্ট) বিক্রি না হলে কাল (রোববার- ১১ আগস্ট) থেকে লোকসানে ছেড়ে দিতে হবে গরু-মহিষ।

আরও পড়ুন: ‘খাইট্টা লিবেন নাকি মামা, তেঁতুলের খাইট্টা’

শুধু সিটি হাট নয়, মহানগরীর উপকণ্ঠের নওহাটা, দামকুড়া, কাঁটাখালী, পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাট, ঝলমলিয়া হাট, গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট, মহিষালবাড়ি হাট, বাগমারার ভবানীগঞ্জ, তাহেরপুর হাট, মোহনপুরের কেশরহাট, তানোরের মুণ্ডুমালা হাটেরও একই চিত্র।

গরু-মহিষ-ছাগলে ভর্তি হাট, ক্রেতা-বিক্রেতাতে মুখর। অথচ বেচাকেনা খুবই কম। ফলে খামারি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে লোকসানের শঙ্কা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। বিক্রি না হওয়ায় আশঙ্কায় তারা এক হাট থেকে গরু নিয়ে অন্য হাটে যাচ্ছেন। গরু নিয়ে এভাবে ঘুরতে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত পরিবহসহ নানান খরচ।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সাইজের গরু, মহিষ, ছাগল রয়েছে। বেশিরভাগ রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে এসেছে পশুগুলো। স্থানীয় খামারিদের পাশাপাশি ব্যাপারিরা কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিক্রির জন্য পশু নিয়ে এসেছেন। হাটে ভারতীয় গরুরে উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ- গতবারের তুলনায় এবার দাম অনেক বেশি। ছোট সাইজের গরুর দাম ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। মাঝারি সাইজের গরু ৭০ থেকে ৮৫ হাজার ও বড় সাইজের গরু ৯০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যন্ত দাম হাঁকানো হচ্ছে। ছোট ছাগলের দাম ৮ থেকে ১০ হাজার, মাঝারি সাইজের দাম ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার ও বড় সাইজের ছাগলের দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাইছে বিক্রেতারা।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, টাকা ছিনতাই

নওগাঁর মান্দা থেকে রাজশাহীর সিটি হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছেন আবদুল লতিফ। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বলেন, ‘আমি তিনটি গরু লালন-পালন করেছি। সারাবছর ধানের গুঁড়া, ভূষি, নালিসহ বিভিন্ন উপাদান ক্রয় এবং শ্রমিক দিয়ে গরুর পরিচর্যা করতে গিয়ে লাখ টাকার উপরে খরচ পড়েছে। লাভ করতে হলে অবশ্যই দাম বেশি চাইতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমি গরু নিয়ে বাগমারার তাহেরপুর হাটে গেছিলাম। সেখানে দু’টো গরু বিক্রি করেছি। আর বিক্রি না হওয়ায় ভালো দাম এবং দ্রুত বিক্রি করার আশায় আজ (শনিবার) সিটি হাটে এসেছি। কিন্তু এখানেও একই অবস্থা।’

খলিলুর রহমান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘১১টা গরু বেচতে আমাকে পাঁচ হাটে ঘুরতে হয়েছে। সবশেষে সিটি হাটে এসেছি। এখনো ছয়টি গরু রয়েছে। কাল (রোববার) বিক্রি করতেই হবে। সেটা কম দামে হলেও ছেড়ে দিতে হবে। না হলে ধার-দেনা পরিশোধ করতে পারব না।’

বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আটটি গরু নিয়ে এসেছি। একটি বিক্রি করেছি। আরও সাতটি গরু রয়েছে। দাম শুনেই চলে যাচ্ছে, কেউ সেভাবে দাম করছে না। আশেপাশের অন্য বিক্রেতারাও তাই বলছেন। আজকে যদি বিক্রি করতে না পারি, কাল কম দামে ছেড়ে দিতে হতে পারে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।’

সিটি হাটে গরু কিনতে আসা আবদুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘গত চার দিন ধরে হাটে ঘুরছি। তবে আমার যে বাজেট, সেই হিসেবে গরু মিলছে না। বিক্রেতারা খুবই চড়া দাম চাইছেন। আজও যদি না হয়, তবে কাল শেষ দিনে এসে যেকোনো একটা কিনে নিয়ে ফিরব।’

রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) থেকে গরু হাটে আসা শুরু করেছি। শুক্রবার (৯ আগস্ট) হাট বেশ জমজমাট ছিল। তবে দামে এখনো ছাড় দিচ্ছে না বিক্রেতারা। হিসেবে মণ প্রতি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। তবে আমি ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা মণ হিসেবে গরু খুঁজছি। তেমন পেলে আজই কিনে নিয়ে যাব। যদি না হয় তবে রোববার (১১ আগস্ট) শেষবার হাটে আসতে হবে। শেষ দিনে গরুর দাম কমবে বলে হাটে এসে শুনছি।’

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা চার লাখ চার হাজার ৫১৯টি। আর জেলার নয় উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ খামারে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪টি কোরবানির পশু লালন-পালন করা হয়েছে। এছাড়া বসতবাড়িতে আরও প্রায় ৫০ হাজার পশু রয়েছে। ফলে অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। অথচ এরই মধ্যে হাটে ঢুকেছে কয়েক হাজার ভারতীয় গরু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর