‘পানির’ দরে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা

ঢাকা, জাতীয়

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 22:06:57

গত বছরও যে চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছিলেন, এ বছর সেই চামড়া কিনছেন ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, `পানির’ দরে চামড়া কিনছেন বড় (পোস্তা ও ট্যানারি) ব্যবসায়ীরা।

সরকার নির্ধারিত দামে ভাল মানের ছোট একটি গরুর চামড়ায় দাম কমেছে এক থেকে দেড়শ টাকা। মাঝারি মানের গরুর চামড়ার দাম কমেছে অর্ধেক। একইভাবে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে কিনছেন। ছাগল কিংবা ভেড়ার চামড়ার দাম একেবারেই কম।

সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুর থেকে রাজধানীর হাজারীবাগ, মতিঝিল, সায়েন্স ল্যাব, পোস্তা এলাকায় ছোট গরু অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকার নিচের দামের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় কিনছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

মাঝারি গরু অর্থাৎ লাখ টাকার নিচের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। গত বছর একই চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়। সরকার নির্ধারিত দামে এসব চামড়া বিক্রি হওয়রা কথা ছিল অন্তত হাজার টাকা।

এদিন এসব এলাকায় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়াও পাঁচ লাখের উপরে গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকার উপরে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যনারি ও পোস্তার আড়তদাররা তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম বলে তারা চুপ করে বসে আছেন। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রি করতে না পারলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন সংগঠন, মাদরাসা ও এতিম খানার লোকরা চামড়া নিয়ে এসে বিপাকে পড়েছেন।

সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী, ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুট চামড়া লবণ দেওয়ার পরে ৯০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু সোমবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। কোথাও কোথাও আরও কম।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ শুরু

রাজধানীর বাইরে সবচেয়ে ভালো মানের কাঁচা চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। আর মাঝারি মানের চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। যা গত বছরও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

এ বছর পোস্তার ব্যবসায়ীদের সাত লাখ পিস গরুর চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তার মধ্যে ৯০ ভাগ চামড়া এখন কেনার কথা। কিন্তু তারপরও চামড়া কিনছেন না পোস্তার আড়তদাররা।

বাংলাশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘লবণযুক্ত চামড়া কিনব। যারা লবণ দেবে না, আমরা তাদের চামড়া কিনব না।’

তিনি বলেন, ‘মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেন চিন্তাভাবনা করে এবার চামড়া কেনেন। কারণ, আমরা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া সংগ্রহ করছি না।’

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে সব চামড়া কেনার মতো টাকা নেই। ফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এবার সব চামড়া হয়তো কিনতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ট্যানারি মালিক গতবছরের চামড়ার পেমেন্ট এখনো পর্যন্ত দেননি। এছাড়া আগের বছরের চামড়ারও বেশকিছু টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে।’

দেলোয়ার হোসেনের দাবি, ‘পাইকারদের হাতে টাকা না থাকলে তারা চামড়া কিনবে কিভাবে? ফলে অনেক চামড়া এবার নষ্ট হয়ে যাবে। পচে যাবে। টাকার অভাবে হয়তো চামড়ার দামও পড়ে যাবে।’

আরও পড়ুন: বগুড়ায় গরুর চামড়ার সাথে ছাগলের চামড়া ফ্রি! 

এ সম্পর্কিত আরও খবর