ড্রিমলাইনারেও অনিশ্চিত বিমানের ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট

, জাতীয়

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 06:32:07

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে দূরপাল্লার সর্বাধুনিক উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার যুক্ত হলেও বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।

নিউইয়র্কের মতো দূরপাল্লার রুটে ফ্লাইট চালু করতে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের অন্যতম বাধা ছিল দীর্ঘ দূরত্বে চলতে সক্ষম উড়োজাহাজ। এই সমস্যাটি মাথায় রেখে ২০০৮ সালে বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ড্রিমলাইনারের মতো উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছিল।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে বিমান যখন এই রুট বন্ধ করে দেয় এয়ারলাইন্সের ডিসি-১০ মডেলের পুরাতন উড়োজাহাজই ছিল প্রধান বাধা। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (এফএএ) ২৫ বছরের পুরাতন ডিসি-১০ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নামতে বিভিন্ন শর্ত দিয়েছিল। তাছাড়া এই মডেলের উড়োজাহাজ সরাসরি নিউইয়র্কের মতো দূরপাল্লার রুটেও চলতে সক্ষম ছিল না। ঢাকা থেকে ম্যানচেষ্টার হয়ে ডিসি-১০ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতো।

ড্রিমলাইনার টানা ১৬ ঘন্টা উড়তে করতে পারে। ২০০৮ সালে দুরপাল্লার রুটসমূহ চালুর পরিকল্পনা নিয়েই বিমান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ড্রিমলাইনার কেনার চুক্তি করেছিল। বিশেষ করে ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইট পুনরায় চালু করার লক্ষ্য ছিল এয়ারলাইন্সটির। কিন্তু বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত না হওয়ায় এই রুট চালু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট বিমান ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতেই হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের কোনো উড়োজাহাজই ওই দেশের মাটিতে অবতরণের সুযোগ পাবে না।

বেবিচক ক্যাটাগরি-২ তে নেমে যাওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিষ্ট্রেশনের কর্মকর্তারা একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, দেশের বিমান চলাচল আইন কানুন মেনে চলা এবং আরো বেশকিছু শর্ত দিয়ে বেশকিছু জায়গায় উন্নতি করার পরামর্শ দেন।

আরও পড়ুন - বিমানের বহরে যোগ হচ্ছে সর্বাধুনিক ড্রিমলাইনার প্লেন

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে কাজ করার পরেও এখন পর্যন্ত বেবিচককে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত করার ঘোষণা দেয়নি।

তবে এফএএ গত ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে তারা একটি প্রতিবেদনও দিয়েছিল। প্রতিবেদনটিকে বেবিচক ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। খুব শিগগিরই এফএএ আরেকটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করার কথা। এই সফরের পরেই এ সংক্রান্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে ধারণা করছে দেশের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচক।

বেবিচক যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে যা-ই বলুক না কেন, বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ড্রিমলাইনার দিয়ে নিউইয়র্কসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া টোকিও, রোম, ম্যানচেস্টার রুটসমূহ পুনরায় চালুর ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ২০০৮ বিমান যখন দূরপাল্লার রুটের পরিকল্পনা করে ড্রিমলাইনার কেনার চুক্তি করে, তখন আশা করেছিল ২০১৮ সাল নাগাদ বেবিচক ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারবে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও ওই অবস্থার উন্নতি হয় না। যা শুধু দেশীয় বিমান চলাচল খাতের জন্য দু:খজনকই নয়, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হবে।”

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও ওই সময় বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটই শুধুই নয়, ঢাকা-টোকিও এর মতো আরো বিভিন্ন দূরপাল্লার রুট চালুর পরিকল্পনা থেকেই ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করা হয়েছিল। তবে এখন সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি রুট পরিকল্পনা না করা যায়, তাহলে এতে প্রতিষ্ঠানটিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর