‘জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে গেল’

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা টোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 12:20:10

‘আমিতো ফুটপাতের উপর দিয়ে হাঁটছিলাম। আমার উপরে গাড়ি উঠে গেল কিভাবে আমি জানি না। জীবনের সবকিছুই নিমিষেই শেষ। এখন কি হবে আমাদের'।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের কেবিনে শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন কৃষ্ণা রায় চৌধুরী।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে কৃষ্ণা এখনও ভাবতে পারছেন না-তার একটি পা নেই। জীবনের আর স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবেন না।

মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন ছেলে কৌশিক রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, চারজনের সংসারে একমাত্র উপার্জন করতেন আমার মা কৃষ্ণা রায়। বাবা অনেক আগেই শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। আমি আর আমার বোন দুজনই পড়াশোনা করছি। আমাদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের সকল খরচ মায়ের উপার্জনে চলে। এই অবস্থায় আমাদের সংসার কিভাবে চলবে। নিজেদের বড়ই অসহায় লাগছে।

কৃষ্ণা রায়ের ছেলে কৌশিক চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'এক্সিডেন্টের পর আমার মায়ের পা কেটে ফেলা হয়েছে। পা কাঁটার পরবর্তী সময়ে এখন প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এখন ভালো নেই, কাটা স্থানে যেকোনো সময় ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

'আমি আর আমার বোনকে এখনো পরিবারের টাকাতেই চলতে হয়। আমার পড়াশোনাটা হয়তো এবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর মায়ের চিকিৎসা করতে অনেক টাকা খরচ হবে। এত টাকাও আমাদের নেই। সরকারকে বলব আমার অসহায় মায়ের পাশে আপনারা দাড়ান। মা আগের অবস্থায় আর ফিরে যেতে পারবে না। তাই মায়ের চলাচলের জন্য কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ, আমাদের পক্ষে এত টাকা নেই যে কৃত্রিম পা লাগাতে পারব'।

পা হারানো কৃষ্ণা রায়ের স্বামী রাধে শ্যাম চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন,' যা হারানোর আমরা তো হারিয়ে ফেলেছি সেটা আর ফেরত পাবো না। তবে এর সঠিক বিচার করতে হবে। ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও বাসের ড্রাইভার হেলপার কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ । বাস কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এসেছিলো ২ লাখ টাকার বিনিময় মীমাংসা করতে। আপনারাই বলেন এটা কি মীমাংসা করার বিষয়। অপরাধ করেছে অপরাধীদের বিচার করতে হবে। আমরা টাকা চাইনা। আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। আর এই অপরাধের বিচার চাই।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের দিকে ট্রাস্ট পরিবহনের ধাক্কায় দুর্ঘটনার শিকার হয় কৃষ্ণা রায় (৫২)। তিনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের(বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী ব্যবস্থাপক (অর্থ) পদে কর্মরত ছিলেন।দুর্ঘটনার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখানে আসার পরে তার এক পা কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর