‘ব্যবসায়ীদের পরিবেশ সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে’

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 15:57:33

শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা ও শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা, শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংক্ষরণে গুরুত্ব দিতে হবে। নানা ধরনের বর্জ্য যেমন, হার্ড ওয়েস্টের মধ্যে সলিড ওয়েস্ট, লিকুইড ওয়েস্ট- এগুলো ব্যবস্থাপনা করবেন। শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার শুরু থেকে পরিকল্পনা করতে হবে।তাহলে পরিবেশ রক্ষা সহজ হবে দেশ ও মানুষের কল্যাণ হবে। আরেকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখবেন, তা হলো প্রতিটি কারখানায় একটি জলাধর রাখা, যাতে করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়। আগুন লাগা বা দুর্ঘটনা ঘটলে এ পানি ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বেসরকারি খাতে সরকারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনীতিতে পরনির্ভরশীল নয়, আমরা নিজের পায়ে দাড়ানোর মতো প্রস্তুতি নিয়ে কা্জ  ‍শুরু করেছি। ৯০ ভাগ প্রকল্প নিজেদের অর্থয়ানে বাস্তবায়ন করছি। আমি সরকার গঠনের পর, বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করে আসছি। আমি চেয়েছি দেশের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। এজন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। আওয়ামী লীগ সরকারের একটা অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালা অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে- যার ফলে মানুষ উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারে।

তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২০২ টি দেশে ৭৫০ টি পণ্য  ও সেবা রফতানি করে ৪৬ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আরও এগিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি বাজেট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি, বৈদেশিক সাহায্যে নয়, নিজেদের সক্ষমতায়। যা জিডিপির ১৮.১ শতাংশ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের প্রশংসা করছে। আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ ছিলো কখন কতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করব। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি।২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে অর্জন করব, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হবে ১০ ভাগ। আমরা যে শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি তা নয়, সঙ্গে সঙ্গে আমরা মুদ্রাস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। যখন কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়, এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন ভোগ করে।

তিনি বলেন, ‘রফতানি বৃদ্ধির জন্য নতুন বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কেও রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।’

২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৬ প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় রফতানি ট্রফি’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান জাতীয় রফতানি ট্রফি পেল: তৈরি পোশাক (ওভেন) খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছে হা-মীম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড। একই খাতে ব্রোঞ্জ ট্রফিও পায় হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এবং রৌপ্যপদক পেয়েছে এ কে এম নিটওয়্যার।

তৈরি পোশাকের নিটওয়্যার খাতে স্বর্ণ ট্রফি পায় স্কয়ার ফ্যাশনস, রৌপ্য ট্রফি ফোর এইচ ফ্যাশনস আর ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইলস পায় ব্রোঞ্জ ট্রফি।  সুতা রফতানি খাতে বাদশা টেক্সটাইলস পায় স্বর্ণ ট্রফি, কামাল ইয়ার্ন রৌপ্য ও ম্যাকসন স্পিনিং পায় ব্রোঞ্জ ট্রফি।

টেক্সটাইল ফেব্রিকস খাতে এনভয় টেক্সটাইল স্বর্ণ, ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং রৌপ্য ও প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। টেরিটাওয়েল খাতে নোমান টেরিটাওয়েল মিলস স্বর্ণ ট্রফি। হিমায়িত খাদ্য খাতে সী-মার্ক (বিডি) স্বর্ণ,  ব্রাইট সী ফুডস রৌপ্য ও বিডি সী ফুডস পেয়েছে ব্রোঞ্জ ট্রফি।

পাটজাত দ্রব্য খাতে আকিজ জুট মিলস পায় স্বর্ণ, জনতা জুট মিলস রৌপ্য এবং করিম জুট স্পিনার্স ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। ক্রাস্ট বা ফিনিশড চামড়া খাতে এস এ এফ ইন্ডাস্ট্রিজ স্বর্ণ, পিকার্ড বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য রফতানি খাতে স্বর্ণ ও বিবিজে লেদার গুডস রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে। পাদুকা রফতানি খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে বে ফুটওয়্যার, এফবি ফুটওয়্যার রৌপ্য ও ফুডবেড ফুটওয়্যার ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।

কৃষিপণ্য রফতানি খাতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে মনসুর জেনারেল ট্রেডিং, রৌপ্য পেয়েছে এলিন ফুডস এবং হেরিটেজ এন্টারপ্রাইজ ব্রোঞ্জ ট্রফি। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রাণ এগ্রো স্বর্ণ ট্রফি, এলিন ফুড পেয়েছে রৌপ্য আর হবিগঞ্জ এগ্রো ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। ফুল ফলিয়েজ খাতে রাজধানী এন্টারপ্রাইজ স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে। হস্তশিল্প পণ্য রফতানিতে কারুপণ্য রংপুর স্বর্ণ, বিডি ক্রিয়েশন রৌপ্য ও ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে বেঙ্গল প্লাস্টিকস স্বর্ণ, ডিউরেবল প্লাস্টিকস রৌপ্য ও অলপ্লাস্ট ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। সিরামিক খাতে শাইনপুকুর সিরামিকস পেয়েছে স্বর্ণ ট্রফি।

হালকা প্রকৌশল পণ্য রফতানিতে ইউনিগোরি সাইকেল স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে। রংপুর মেটাল রৌপ্য ও মেঘনা রাবার পেয়েছে ব্রোঞ্জ ট্রফি। ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য রফতানিতে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং স্বর্ণ ও বিআরবি কেবল রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে। মেরিন সেফটি সিস্টেম ও বিএসআরএম স্টিল অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য খাতে স্বর্ণ ও রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রফতানিতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ খাতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস পেয়েছে রৌপ্য ট্রফি। কম্পিউটার সফটওয়্যার রফতানিতে সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে।

ইপিজেডের শতভাগ বাংলাদেশি মালিকানাধীন তৈরি পোশাক রফতানিতে ইউনিভার্সেল জিন্স স্বর্ণ, প্যাসিফিক জিন্স রৌপ্য ও জিন্স ২০০০ ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। ইপিজেডভুক্ত শতভাগ দেশি মালিকানার অন্যান্য পণ্য ও সেবা খাতে ফারদিন এক্সেসরিজ স্বর্ণ, শাশা ডেনিমস রৌপ্য ও আরএম ইন্টারলাইনিংস ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজ খাতে মন ট্রিমস স্বর্ণ, ইউনিগোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং রৌপ্য এবং জাবের অ্যান্ড জুবায়ের এক্সেসরিজ ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে।

অন্যান্য প্রাথমিক পণ্য রফতানিতে স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে অর্কিড ট্রেডিং, রৌপ্য বাং চুং ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম আর বেঙ্গল পলি অ্যান্ড পেপার স্যাক ব্রোঞ্জ ট্রফি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সেবা রফতানিতে মীর টেলিকম স্বর্ণ ট্রফি পেয়েছে। নারী উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকদের জন্য সংরক্ষিত খাতে মুন্নু সিরামিকস স্বর্ণ ও নিহাও ফুড কোম্পানি রৌপ্য ট্রফি পেয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর