ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

ট্রেনের সাইরেন বাজতেই প্ল্যাটফর্মে ছুটে যান কুলিরা

রাজশাহী রেল স্টেশন। যেখানে নিত্যদিনের জীবনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে অনেকের জন্য। এখানে গোলাম মোস্তফা, আফজাল, শরীফ, কামালসহ আরো প্রায় ৪০ জন কুলি প্রতিদিনের বিভিন্ন ট্রেনের সাথে ছুটে চলেন। তাদের কাজ যাত্রীদের ভারী লাগেজ বহন করা। ট্রেনের সাইরেন বাজতেই তারা প্ল্যাটফর্মে দৌড় দেন, এক নিঃশ্বাসে।

তাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয় কে কার আগে ট্রেনের বগিতে উঠতে পারে। কে আগে নিজের টলিতে মালামাল উঠাতে পারে। ট্রেনের সামনে গিয়ে তারা দাঁড়িয়ে থাকে এবং যাত্রীদের মালামাল বহনের জন্য অনুরোধ করতে থাকে। যুগের পর যুগ, মাসের পর মাস ধরে এভাবেই চলে আসছে তাদের জীবন।

বিজ্ঞাপন

শুধু রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে নয়; প্রায় সারাদেশেই মাঝারি থেকে বড় রেল স্টেশনগুলোতে এই চিত্র দেখা যায়।

প্রতিদিনের এই ছুটে চলা শুধু তাদের পেশাগত জীবনেরই অংশ নয়, বরং এটা তাদের পরিবারের জীবনযাত্রার এক অপরিহার্য উপাদান।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে তাদের আয় রোজগার না বাড়ায় বেশ কষ্টেই দিন যাচ্ছে তার। আয় রোজগার হয় দিনে তিন থেকে চারশো টাকা। কিন্তু; খরচ হয়ে যায় ৫০০ টাকা ৬০০ টাকা। এতে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে হালাল পথে রোজগার করতে পেরে স্বল্প আয়েও খুশি তারা।

গোলাম মোস্তফা, যিনি গত ৪৫ বছর ধরে এই পেশায় জড়িত, তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিনের এই দৌড় আসলে আমাদের পরিবারের জন্য রুটি-রুজির লড়াই। এক একটা ট্রেন যেন আমাদের আশার প্রতীক।

এই কুলিরা যে শুধু লাগেজ বহন করেন তা নয়, তারা মূলত যাত্রীদের একটি বিশ্বাসযোগ্য সহায়তা প্রদান করে থাকেন। রাজশাহী স্টেশনের এই কর্মীদের কাজের পরিসর বিস্তৃত হয়ে আছে ট্রেনের আগমন থেকে বিদায় পর্যন্ত। আফজাল নামের আরেক শ্রমিক (কুলি) বলেন, প্রত্যেক যাত্রীর সাথে আমাদের একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে, যা কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে আরও দৃঢ় হয়।

আরেক শ্রমিক কামাল বলেন,  এই পেশায় ঝুঁকির অংশও কম নয়; আমরা প্রতিদিন ভারী লাগেজ বহন করি, যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর চাপ ফেলে। কিন্তু পরিবারের জন্য এই পরিশ্রম আমাদের জন্য অপরিহার্য।

রাজশাহী রেল স্টেশনের প্রতিদিনের এই দৃশ্য শুধু একটি প্ল্যাটফর্মের চিত্র নয়, এটি বাংলাদেশের অনেক রেল স্টেশনের একটি পরিচিত দৃশ্য, যেখানে গোলাম মোস্তফার মতো কুলিরা প্রতিদিন নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে যাত্রীদের সেবা করে যান।

রাজশাহী রেল স্টেশনের এই নিয়মিত দৃশ্যগুলি বাংলাদেশের অন্যান্য রেল স্টেশনের মতোই, যেখানে কুলিরা প্রতিদিন তাদের পরিবারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। তাদের জীবন ও পেশাগত দায়িত্ব এক উপহাসমূলক চ্যালেঞ্জের মতো, যা তাদের কেবল আর্থিক নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং একটি সমাজের অংশ হিসেবে তাদের অবদানের জন্য প্রয়োজন।