ডেসটিনির পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের হাট!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 12:32:19

কক্সবাজার থেকে ফিরে: দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের একটি বড় ক্ষেত্র কক্সবাজার জেলা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ২৯ গডফাদারসহ ১০২ জন ইয়াবা কারবারি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আত্মসমর্পণের পর এ পর্যন্ত র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির সঙ্গে ১১০ জন মাদক ব্যবসায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এছাড়া মাদকের ওপর রয়েছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এতো পদক্ষেপের পরও থামছে না মাদক ব্যবসা। অভিযানের দুই বছর পার হলেও কক্সবাজারে কেন মাদক বন্ধ হচ্ছে না, তা নিয়েও আছে নানা বিতর্ক।

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র সুগন্ধা পয়েন্টে ডেসটিনির পরিত্যাক্ত ভবনে বসছে মাদকের হাট। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক বেচাকেনা। এই হাটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ সব ধরনের মাদক। পাশাপাশি মাদক সেবীদের আড্ডার স্থান হিসেবেও বেশ পরিচিত হোটেলটি।

অনুসন্ধানী তথ্য বলছে, এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির যখন সারা দেশে একচেটিয়া ব্যবসা করছিল, তখন প্রতিষ্ঠানটি সুগন্ধা পয়েন্টে এই হোটেলটি গড়ে তোলে। পরে ২০১২ সালে ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে হোটেলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। এরপর থেকে এটি দেখাশোনা করেন ডেসটিনির কক্সবাজার জেলার সাবেক প্রধান কর্মকর্তা আবুল কালাম। আর তার ছত্রছায়ায় হোটেলটিতে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।

পরিত্যক্ত ভবনে বসে মাদক সেবন করছেন 

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুগন্ধা পয়েন্টে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ১০ তলা বিশিষ্ট ওই হোটেলটি। হোটেলের তিন তলায় প্রবেশ করলে দেখা যায় তিনটি রুমে বসেছে মাদকের হাট। একই তলায় আরও দুটি রুমে দেখা যায় কয়েকজন মাদকসেবীকে। তারা তখনও মাদক সেবন করছেন। একই দৃশ্যের দেখা মেলে হোটেলের চার তলার তিনটি কক্ষে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবুল কালাম পরিত্যক্ত এ হোটেলের প্রতি রুম মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ৫-৭ হাজার টাকায় করে ভাড়া দেন। এছাড়া মাদক ব্যবসার লাভের টাকার নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি ভাগও পান তিনি। সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও অজানা এক কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় ভবনটি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পুরনো। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমি এখন ব্যস্ত আছি। আমি এই বিষয়ে পরে কথা বলব।’

জেলা পুলিশের তৎপরতার পরও ডেসটিনির পরিত্যক্ত ভবনে কিভাবে মাদক কেনাবেচা চলছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের সার্কেল পুলিশ সুপার আদিবুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ওই ১০ তলা ভবনটি পরিত্যক্ত। সেখানে স্বাভাবিক মানুষের তেমন আনাগোনা নেই। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবী সুযোগ নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। পুলিশ এখানে কাউকে মাদক ব্যবসা করতে দিবে না।’

পলিথিন ভর্তি মাদকের পুটলি

 

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যার নিয়ন্ত্রণে এ ভবনটি রয়েছে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।’

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও কিভাবে আবুল কালাম কক্ষ ভাড়া দেন, এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজ্বস) আশরাফুল আফসার বার্তাটোয়েন্টি.কমকে বলেন, ‘আবুল কালাম পরিত্যক্ত হোটেলটির কক্ষ ভাড়া দিয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। তবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। নিশ্চিত হতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সুগন্ধা বিচের পাশে এমন মাদকের আখড়ার ফলে পর্যটকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পর্যটকদের ব্যাগ টানা পার্টি বা কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের সঙ্গেও জড়িত ওইসব মাদকসেবীরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো.জিল্লুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটকরা হয়রানি হতে পারে এমন বিষয়ে আমরা আপস করিনা। যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে জেলা পুলিশের সঙ্গে সম্বনয় করে আমরা কাজ করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর