অঘটনের জন্ম দিতে চান এরশাদের ভাতিজা আসিফ

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-29 08:35:23

আগের মতো নেই রংপুরের মানুষের সস্তা আবেগ আর ভালোবাসা। এ কারণে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দিতে মরিয়া তারই চাচাতো ভাই হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। তাই জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী এরশাদের অভিমানী এই ভাতিজা।

পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে আসা সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আসিফের বিশ্বাস এবার রংপুরের মানুষ আর ভুল করবে না। নির্বাচন নিয়ে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি জানান, জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সময়ের নাটকীয় সমীকরণ আর সিদ্ধান্ত অদল-বদলে রংপুরের মানুষ ভারাক্রান্ত।

আসিফের অভিযোগ, ‘দলের গুটি কয়েক নেতা স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে কোনো মূল্যায়ন করেন না। বরং রংপুরের মানুষের আবেগ ভালোবাসা নিয়ে একের পর এক সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের ভুল সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টিতে বিভাজন তৈরি করেছে।’

এদিকে লাঙ্গল কাঁধে বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন সাদ এরশাদ। প্রতিদিন নগর-সদরের হাটে বাজারে যাচ্ছেন। ভোটারদের মন জয় করতে বুকে টেনে নিচ্ছেন। হাসি মুখে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। সাদ এরশাদের এমন সরব প্রচারণার সময় তার পাশে নেই স্থানীয় জাতীয় পার্টির বড় একটি অংশ। এতে এরশাদভক্ত সাধারণ ভোটাররা রয়েছেন বিভ্রান্তিতে।

অন্যদিকে এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে, সাবেক সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শাহরিয়ার আসিফও সাড়া পাচ্ছেন। স্থানীয় প্রার্থী হওয়াতে তার প্রতি সাধারণ মানুষের কদর বেড়েছে। এতে দুই ভাইয়ের ভোটযুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। সাধারণ মানুষের আলোচনায় তৈরি হচ্ছে নানা কৌতূহল। তবে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে, তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

গুঞ্জন উঠেছে, সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আসিফের পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির একটি অংশ নীরবে কাজ করছে। যদিও প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত আসিফের সঙ্গে তিন দলের বড় নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। তবে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদ নবী মুন্না রয়েছেন আসিফের সঙ্গে। তিনি আসিফের মোটরগাড়ি (কার) প্রতীকে ভোটারদের কাছে ভোটও চাইছেন।

যদিও ভোটগ্রহণের এখনো বাকি ১০ দিন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জেলা জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী পথসভা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন সাদ এরশাদ।

অন্যদিকে এখনো দলবলসহ ধানের শীষের প্রার্থী রিটা রহমানের সঙ্গে দেখা মিলছে না বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ রংপুরে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় মনোবল ভেঙেছে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। এখন এই বড় তিন দলের নেতাকর্মীরা স্থানীয় প্রার্থী না পাওয়ায় মনে এক ধরনের ক্ষোভ পুষছেন। এই পরিস্থিতিতে অন্যদের মান অভিমান আর ক্ষোভকে পুঁজি করে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ভোটারদের কাছে ছুটছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহরিয়ার আসিফ।

শেষ পর্যন্ত যদি অভিমান ভেঙে জাতীয় পার্টির সবাই সাদ এরশাদের পক্ষে না আসে, আর বিএনপির স্থানীয় নেতারাও থাকে রিটা রহমান বিমুখ, সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও তাদের নিজস্ব প্রার্থী না থাকায় কৌশলগত কারণে আসিফের পক্ষ নেন, তাহলে সাধারণ ভোটারসহ তিন দলের ক্ষোভের ভোটে এরশাদবিহীন রংপুরে ঘটতে পারে প্রথম অঘটন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর