সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহসভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, ‘রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন নানাভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।’
শনিবার (৫ অক্টোবর) সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘বন রক্ষায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন ঘিরে অনুমোদিত সব প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথা শোনে না। মানবাধিকার কর্মী ও সবার মতামত উপেক্ষা করে সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। পাশেই ফার্নেস অয়েলের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দর, বনের পাশে শিল্পয়ানের কার্যক্রম চলছে। এ বনকে ঘিরে ১৫০টি শিল্পপ্লট দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২৮টি পরিবেশের জন্য মারত্মক ক্ষতিকর লাল ক্যাটাগরির শিল্প রয়েছে।’
এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে সুন্দরবন। বিশ্বের কাছে দেশ ও জাতি হিসেবে এটি হবে একটি বড় অযোগ্যতার ও লজ্জার বিষয়। সুন্দরবন বাঁচাতে সরকার যত্নশীল নয়। তাই বন রক্ষায় ইউনেস্কোর পদক্ষেপকে সমর্থন করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘সুন্দরবনের অদূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০১৭ সালে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪১তম সভায় বন রক্ষায় বাংলাদেশকে কিছু সুপারিশ দিয়েছিল ইউনেস্কো। এগুলো হলো-সামগ্রিক সমীক্ষার আগে সুন্দরবনের আশেপাশে বড় কলকারখানা নির্মাণ বন্ধ রাখা, সুন্দরবন এলাকার জলপথে নৌযান চলাচল ও নদী ড্রেজিংয়ে সর্তকতা অবলম্বন করা এবং প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা চালানো। আজারবাইজানের রাজধানী বাকু শহরে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভায় এসব সুপারিশের ওপর আলোচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে সুন্দরবন বিপদাপন্ন ঐতিহ্য তালিকায় চলে যেতে পারে।’
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. এম এ মতিন বলেন, ‘আজ যে বিশ্ব এত উষ্ণ হয়ে উঠেছে, তা গত ১২ বছরে যে কয়লা পুড়িয়েছি, তার ফল। সামনে কয়লা ব্যবহার বন্ধ না করলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা কঠিন হবে। বাংলাদেশের মধ্যেই ৬৮ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।’
সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সাইক্লোন থেকে বাংলাদেশকে বাঁচায় সুন্দরবন। বাংলাদেশের মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হতে চলেছে। যারা এদেশে থাকতে চাই, তাদের সুন্দরবন বাঁচানোর লড়াই করতে হবে।’
সদস্য শরীফ জামিল বলেন, ‘সরকার ইউনেস্কোর কথা শুনছেন না। ভারতের সবচেয়ে খারাপ কোম্পানি সুন্দরবনে এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় জড়িত। ভারতে তারা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করে পরিবেশ ধ্বংস করেছে। তারা এখন বাংলাদেশ ধ্বংস করতে এসেছে। বাংলাদেশ এখন ভারতের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চায়। তাহলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কী দরকার?’