সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে কুমারী পূজা হলো একাধারে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদার প্রতিষ্ঠা। নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর সৃষ্টিকর্তার আরাধনাই কুমারী পূজার শিক্ষা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হলো কুমারী পূজা।
এ দিন ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে মণ্ডপে অষ্টমীর ঘট স্থাপনের মাধ্যমে পূজা অর্চনা শুরু হয়। অষ্টমীর দিনে কুমারী ও সন্ধি পূজাসহ পুস্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়েছে মণ্ডপগুলোতে। রাজধানী ঢাকার পূজা মণ্ডপগুলোর মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে প্রতিবারের ন্যায় এবারো ঘটা করে পালিত হলো কুমারী পূজা।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শ্রীমতি প্রশংসা প্রিয়তা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে পাঁচ বছর বয়সী এক কুমারী মেয়েকে শাস্ত্র মতো গোসল ও নতুন কাপড় পড়িয়ে, ফুল-চন্দন ও মুকুট পরিয়ে আরো কিছু আচার এবং রীতি সম্পন্ন শেষে মণ্ডপে হাজির করা হয়। দেবীর আসনে বসিয়ে এই বালিকাকে শুদ্ধ নারী কল্পনা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবী রূপে পূজা করেন।
এবার দেবীরুপে কুমারী পূজার আসনে বসা প্রিয়তা পুরাণ ঢাকার লক্ষ্মীপুরের শ্রী শংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীমতী গায়েত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক দম্পতির সন্তান। প্রিয়তা পড়াশোনা করছেন রাজধানীর চাইল্ড হ্যাভেন স্কুলে।
কুমারী পূজা সম্পর্কে রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে পুরোহিত শ্রী স্বপন ধী মহারাজ বলেন, দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার বিধান রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মাঠে নয় কুমারীকে পূজা করেন। তখন থেকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে মহা ধুমধাম করে এই পূজার প্রথা চলে আসছে। তবে, সপ্তমী থেকে শুরু করে বিজয়াদশমী পর্যন্ত যে কোন এক দিন এই পূজা পালন করা যায়। নির্দিষ্ট কোন বাধা ধরা দিন না থাকলেও অষ্টমীর দিনেই সব জায়গায় এই পূজা বেশি প্রচলিত।