‘ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বৈষম্যের শিকার হই’

ঢাকা, জাতীয়

আকরাম হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 09:18:28

অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম সিদ্দিকী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। নানান প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম করেছেন তিনি। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সমাজে বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ এই আইনজীবীর।

সম্প্রতি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম’র সাথে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, মো. রেজাউল করিম সিদ্দিকী বর্তমানে ব্লু ল ইন্টারন্যাশনাল-এর ইন-কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করছেন। স্বপ্ন ছিল বিচারক হওয়ার। ২০০৭ সালে জ্যুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফলাফলে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এর পরের বছরও একই ফলাফল হওয়ায় আর কোনও পাবলিক পরীক্ষায়ই অংশ নেন নি। ফলে তার লালিত স্বপ্ন অধরা থেকে যায়।

মো. রেজাউল করিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, মেধা থাকার পরও প্রতিবন্ধীরা চাকরি পান না। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ দিতে চান না। কিন্তু কারও দয়ায় নয়, মেধা বিবেচনা করে আমাদের কাজ দিন।’

তিনি বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষায় আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়- প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আমি কিভাবে কাজ করবো? জবাবে আমি জানিয়েছিলাম, প্রতিবন্ধী হয়েও যেহেতু ক্লাস ওয়ান থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে পেরেছি এবং এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করতে পেরেছি, তাহলে আমি সব কাজই করতে পারবো। এরপর আমাকে আর কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। পরে চূড়ান্ত রেজাল্টে আমার নাম আসেনি।’

এই আইনজীবী জানান, সে বছর মৌখিক এক হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকিরা বাদ পরেন, তিনিও বাদ পড়েন।

তিনি বলেন, ‘ধরে নিলাম সেইবার মৌখিক পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় আমিও বাদ পরেছিলাম। কিন্তু পরের বছরও একই ফলাফল। এরপর আর কোনও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিনি। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম- মেধা নয়, শরীরিক প্রতিবন্ধিতার জন্যই আমার চাকরি হয়নি। এরপর থেকে আমি বেসরকারি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সাথে বেশি অবিচার করছে। কারণ আমাকে তারা পরীক্ষায় বসতে দিয়েছে, মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে কিন্তু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিয়োগ দেয়নি।’

রেজাউল মনে করেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করা প্রয়োজন। কারণ যদি মেধার বিবেচনায় চাকরি হতো তাহলে কোটা দরকার হতো না। প্রতিবন্ধীরা মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে চাকরি নিত। কিন্তু আমাদের দেশে মেধার বিচার করা হয় না। প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। অধিকাংশ সময় একজন সাধারণ নাগরিকের স্বাভাবিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত হন। প্রতিবন্ধীরা অনেক সংগ্রাম করে পড়াশুনা করেন। পড়াশুনা শেষে যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের চাকরি হয় না। ফলে যদি কোটা না থাকে তাহলে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সরকারি চাকরির বাইরে থেকে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কোটা বাতিলের আন্দোলনের সময় সব ধরণের কোটা বাতিল করা হয়। তখন সবাই তার পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেন। কিন্তু সব ধরনের কোটার সঙ্গে প্রতিবন্ধী কোটাও বাতিল হয়। সেটা আলাদা করে কোনও আলোচনায় আসেনি।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের সমাজ প্রতিবন্ধীদের জন্য যথেষ্ট উপযোগী না। সাধারণ মানুষ যে সুযোগ সুবিধা পান আমরা সেটাও পাই না। রাষ্ট্র ও সামাজিকভাবে সব জায়গাতে আমরা বৈষম্যের শিকার হই। সকালে ঘুম থেকে উঠে বৈষম্যেরে শুরু হয়, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বৈষম্য চলতে থাকে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর