ভোলার ঘটনা নিয়ে যা বলল পুলিশ সদর দফতর

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 16:48:25

ভোলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

রোববার (২০ অক্টোবর) পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মীর সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য দেওয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বোরহানউদ্দিন থানাধীন ঈদগাহ মাঠে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ সাধারণ মানুষের হতাহত হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে পুলিশ সদর দফতর প্রকৃত ঘটনাটি জনসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছে।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য (২৫) নামে এক যুবকের ফেসবুক আইডি (ফেসবুক আইডিটি হলো- Biplob Chandra Shuvo)  হ্যাক হয়। এর প্রেক্ষিতে বিপ্লব চন্দ্র নামে এক যুবক সেদিন রাত ৮টার দিকে বোরহানউদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর-৪৪০। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) জানান। ওসি বিষয়টি ভোলা জেলার পুলিশ সুপারকে জানান। পরে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তাকে কলকারী শরীফ এবং ইমন নামে দুই যুবককে যথাক্রমে পটুয়াখালী এবং বোরহানউদ্দিন থেকে আটক করে পুলিশ। আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বোরহানউদ্দিন থানায় আনা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে বিপ্লবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কথিত কমেন্টের জেরে এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উত্তেজিত হতে থাকেন। ফেসবুকে ধর্মীয় মন্তব্যের অভিযোগে মন্তব্যকারীর ফাঁসি দাবি করে স্থানীয় আলেম সমাজ। পরে রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ঈদগাহ মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তারা। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ওসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বোরহানউদ্দিন থানায় দীর্ঘ সময় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলেম সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যকে আটক দেখানো হয়। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে প্রতিনিধিত্বকারী আলেমরা তাদের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি বাতিল করেন।

সমাবেশ বাতিলের ঘোষণা সত্ত্বেও পুলিশ সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকে। শনিবার সকাল থেকেই কিছু লোক ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হতে থাকেন। ময়দানের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর জন্য ১৭টি মাইক আনে একটি মহল। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। সমবেত লোকজনকে সরিয়ে নিতে বললে উপস্থিত আলেমরা নিশ্চিত করেন যে কেউ কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। এদিকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় এবং যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পুলিশকে সহায়তা দিতে রোববার সকালেই বরিশাল থেকে রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ভোলায় যান। অতিরিক্ত ডিআইজি, ইউএনও এবং পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

তারা ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে প্রয়োজনীয় সব আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তাদের বার বার আশ্বস্ত করেন। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সমবেত লোকজন ঈদগাহ ময়দান ত্যাগ করেন। উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার পর পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মাদরাসার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে অন্য একটি গ্রুপ ঈদগাহ ময়দানে ঢুকে সাধারণ ধর্মপ্রাণ লোকজনকে উস্কানি দিতে থাকেন। তারপর, সহসাই একদল লোক বিনা উস্কানিতে মাদরাসার অফিস কক্ষে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ করেন। আক্রমণকারীদের একদল আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায়। আক্রমণকারীদের হামলায় পুলিশের এক সদস্য গুলিবিদ্ধসহ দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এ সময় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজিও আহত হন। এ পরিস্থিতিতে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আত্মরক্ষার্থে এবং সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আক্রমণকারীদের গুলিতে গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে অন্তত দু’জনের মাথা ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে থেঁতলানো বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে ডিআইজি বরিশাল রেঞ্জকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

অতএব, সার্বিক ঘটনা পর্যালোচনায় এটি স্পষ্ট যে পুলিশ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে শুরু থেকে তৎপর থাকা সত্ত্বেও এবং আলেম সমাজ পুলিশের ব্যবস্থায় আস্থা রেখে কর্মসূচি স্থগিত করলেও কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল ধর্মকে পুঁজি করে একটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরির অপপ্রয়াস চালিয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ সারাদেশে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না করতে এবং কোনো অবস্থাতেই ধর্মীয় উপাসনালয়ে আক্রমণ না করতে সাধারণ জনগণকে অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। পাশাপাশি, গুজবে কান না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশকে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর