দুর্যোগ মোকাবিলায় ১ কোটি স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলা হবে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সোনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এখন থেকে দুর্যোগ মোকাবিলার সকল প্রস্তুতি রাখতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতে প্রশিক্ষণ দিয়ে ১ কোটি স্বেচ্ছাসেবী গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান মুহিব।

শনিবার (১৮ মে) পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল শিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসের হল রুমে অনুষ্ঠিত সংলাপে কুয়াকাটায় উপকূলীয় মানুষদের দুর্যোগের পূর্বে প্রস্তুত করতে পূর্বাভাস-ভিত্তিক আগাম কার্যক্রমের কার্যকারিতা বিষয়ক দ্বিতীয় পর্যায়ের বিভাগীয় সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) ও জার্মান রেড ক্রস’র কারিগরি সহযোগিতায় সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)।

সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী বলেন, পূর্বাভাস-ভিত্তিক আগাম কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি আধুনিক সংস্করণ, যা ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে পূর্বাভাস-ভিত্তিক অর্থায়ন (FbF) নামে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করে। ২০১৯ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হলে এটি সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে রূপ নেয়।

অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে আশ্রয়ণ কেন্দ্র গড়ে তোলার। যদিও বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ এখন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশংসা অর্জন করেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসানের (এলডিসি) সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আশরাফুন নেছা, সংসদ সদস্য বেগম শাহীন আক্তার।

এছাড়াও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ পরিবেশ ও দূর্যোগ নিয়ে কাজ করে এমন সকল সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

   

চুয়াডাঙ্গায় বাস মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজছাত্র নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চুয়াডাঙ্গায় যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজ হোসেন (১৮) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়েছেন মোটরসাইকেলের ওপর আরোহী সজিব (১৮)।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিকেল পাঁচটার দিকে চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বেলালমারী মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রাজ হোসেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি মাদ্রাসাপাড়ার মজনু মিয়ার ছেলে ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। আহত সজিব একই এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে।

নিহত রাজের বন্ধু ফয়সাল বলেন, মঙ্গলবার সকালে বন্ধুরা মিলে মোটরসাইকেলযোগে কুষ্টিয়ায় ঘুরতে গিয়েছিল। অন্যরা অনেক আগেই ফিরে এলেও রাজ ও সজিব পরে আসে। বিকেল পাঁচটার দিকে তারা বোয়ালামারী পৌঁছালে সামনে থেকে আসা রয়েল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে গুরুতর জখম হয়ে সজিব প্রাণে বাঁচলেও ঘটনাস্থলেই রাজের মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা একটি পাখিভ্যানযোগে রাজ ও জখম সজিবকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জোবায়দা জয়া বলেন, 'আমরা রাজ নামের এক যুবককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। সজিবের মাথা ও একহাতে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, 'যাত্রীবাহী পরিবহন ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাজ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেলটি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। লাশ বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না পেলেও এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে।'

;

দরজায় কড়া নাড়ছে কুড়িগ্রামের বন্যা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর কুড়িগ্রামে কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব অঞ্চলের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোন সময় এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর ১২টায় পাউবো’র দেয়া তথ্যমতে,গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৮ সে.মি, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৭ সে.মি. তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ০২ সে.মি. ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৬ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়,গত ২৪ ঘন্টায় জেলার উত্তরদিকে দুধকুমার পয়েন্টে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন জেলায় বজ্রসহ ভারীবৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, উজানে ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার নদ-নদী গুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘন্টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি, পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি ও তালুকশিমুল বাড়ী পয়েন্ট ধরলার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, জেলায় প্রাথমিকভাবে বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে ১৭ লাখ টাকা ও ১৮০ মেট্রিক টন জিআর চাল মজুদ আছে। উদ্ধারের জন্য বেশ কিছু নৌকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

;

বর্জ্য নিষ্কাশনে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল দেয়ার অনুরোধ মেয়রের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বর্জ্য নিষ্কাশনে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল দেওয়ার অনুরোধ মেয়রের

বর্জ্য নিষ্কাশনে ডিএসসিসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল দেওয়ার অনুরোধ মেয়রের

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্জ্য নিষ্কাশনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসির) নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, আমাদের কাউন্সিলররা প্রতিনিয়ত চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিদিনের ময়লা আমরা প্রতিদিনই পরিষ্কার করছি। কিন্তু, তারপরেও কেউ ময়লা দেখলে করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কল দেওয়ার অনুরোধ রইলো। 

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকালে সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে মেয়র এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা ফোন পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার ভেতরে কোরবানির পশুর ময়লা এবং পশুর হাটের ময়লা পরিষ্কার করব।

ঈদের তৃতীয় দিনে কেউ যাতে কোরবানির পশু জবাই না করে এমন আহবান জানিয়ে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ঈদের তৃতীয় দিনের দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমাদের বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম চলমান থাকবে। সেজন্য তৃতীয় দিনে কেউ কোরবানির পশু জবাই না করলে ভালো হবে।

মেয়র আরও বলেন, করপোরেশনের পক্ষ থেকে সব জায়গায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার বাড়িতে জীবাণু নাশক পাউডার, স্যাভলন দেওয়া হয়েছে। আমরা অত্যন্ত সফলভাবে ঈদের বর্জ্য অপসারণ কাজ চলমান রেখেছি।

হটলাইন নাম্বার হলো-01709900888 ও 02223386014

;

‘বিদেশি পানি’র বন্যা



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
‘বিদেশি পানি’র বন্যা

‘বিদেশি পানি’র বন্যা

  • Font increase
  • Font Decrease

কানাইঘাটের তালবাড়ি এলাকার ‘চড়া ভাই’ বৃষ্টি ভেঙে পাড়ি দিয়েছেন সুরমা নদী। ‘চড়া ভাই’ মূল নাম নয় তার; তবে এ নামে এলাকায় বেশ পরিচিত। মূল নাম আড়ালে পড়ে গেছে এ নামের আড়ালে, অথবা বলা যায়, কখনো জিগ্যেস করা হয়নি অন্য কোন নামের। ‘চড়া’ বলতে কঠিন মেজাজ কিংবা অতিরিক্ত কিছু নয়, তিনি নরম স্বভাবের, সজ্জন; এবং এ নাম এসেছে নাকি তার চড়ুই পাখি থেকে। এমনটা হেসে-হেসে তিনিও বলেন। লোকজন মায়া করে ‘চড়া ভাই’ নামে ডাকে, দাবি করেন তিনি।

সুরমায় বেশ স্রোত। এমন স্রোতে নৌকার মাঝি কায়দা করে নৌকা চালান। পাড়ের কাছ দিয়ে উজানের দিকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এরপর নদী অতিক্রম করতে ভাসিয়ে দেন স্রোতে। স্রোতের টান আর ইঞ্জিনের শক্তিতে নৌকা এগোয়। এরপর নির্ধারিত ঘাটের কাছাকাছি এসে তীরে ভেড়ান। বৈঠার নৌকা নয় এটা, ইঞ্জিনচালিত বলে এই স্রোতে এখনো মানুষ নদী পাড়ি দিতে পারছে।

আলীনগর ঘাটের নদীর এই পাড়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা, অন্য পাড়ে কানাইঘাট। বিয়ানীবাজারের পাড়ের নদীর তীর তুলনামূলক উঁচু। উপচে পানি ঢুকেনি এখনো। তবে কানাইঘাট পাড়ের তীরের অনেক জায়গায় পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। রাস্তাঘাট ডুবিয়েছে, কারো কারো ঘরেও ওঠেছে পানি; এছাড়া বেশিরভাগই আছেন ঝুঁকিতে। মানুষই কেবল নয়, গবাদি পশু, গোলার ধান সব আছে ঝুঁকিতে। গত ক'বছর এমনটা হয়ে পড়েছে নিয়মিত দৃশ্য, যেন নিয়তির লিখন।

‘চড়া ভাই’র ভাষায় এটা ‘বিদেশি পানি’। সত্তরোর্ধ তিনি। অনেক বন্যা দেখেছেন জীবনে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোর বন্যা তার কাছে যেন অন্যরকম। দুই বছর আগে তার ঘরে পানি ওঠেছিল। এবার এখনই তেমনটা না হলেও লক্ষণ সুবিধার না বলছেন তিনি। বললেন, বিদেশি পানি আর বৃষ্টি বন্ধ না হলে এবারের অবস্থা আগের চাইতে খারাপ নাকি হবে! আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেঘ (বৃষ্টি) কমার লক্ষণ নাই। বৃষ্টি সিলেটের নিয়মিত দৃশ্য এখন। টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। এ কেবল বৃষ্টি নয়, যেন কলসি উপচে পানি পড়া!

‘চড়া ভাই’ নদী পাড়ি দিয়ে নিয়মিত আসেন এ পাড়ে, কাজের সন্ধানে। ছয় সদস্যের সংসার তার। একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। এই বয়সে দিনমজুরের কাজ করেন। হাসিমাখা মুখ আর মজার ছলে কথা বলেন বলে প্রয়োজন ছাড়াই অনেকেই তাকে দিয়ে কাজ করায়। আধাবেলা কাজ করে বেশিরভাগ সময় মজুরির অর্ধেক নিয়ে তিনি চলেও যান। তার পাড়ের লোকজনের কাছে তার কাজ নাই বলে এখানে আসেন। বন্যা-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এবার এসেছেন তিনি কোরবানির মাংসের সন্ধানে। ঈদের দিন কিছু সংগ্রহ করেছেন, ঈদের পরের দিনও কিছু সংগ্রহ করবেন। মায়া করে কেউ কেউ তার জন্যে ফ্রিজে রেখে দেয়, বলেন তিনি।

সেলিম উদ্দিন, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মুরগি বিক্রি করেন। ত্রিশের কোটার যুবক। তার ঘরের বেড়ার কাছাকাছি পানি চলে গেছে। আরেকটু বাড়লে ঘরে ঢুকে পড়বে। পরিবার নিয়ে আছেন ঝুঁকিতে। বললেন, বন্যার সময় এক কষ্ট, আর বন্যার পরে আরেক কষ্ট। বেড়া ধ্বসে পড়ে যায়। তার এলাকা এরইমধ্যে প্লাবিত। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। নদীর পাড়ের কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি। আছে স্রোতও। সন্তানদের নিয়ে ঝুঁকি আর ভোগান্তির অন্ত নেই। সঙ্গে আছে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তা। ত্রাণ কি পৌঁছেছে কিছু, এমন প্রশ্নে সেলিম উদ্দিনের ভাষ্য—অন্যের সাহায্য সহযোগিতায় বেঁচে থাকা যায় না। দুই-তিন কেজি চাউল আর কয়েক মুঠো ডাইল দিয়ে কি দিন যায়; একদিন দিলে বাকিটা সময় নাই, সব নাকি লোকদেখানো!

উল্লিখিত দুইজন, সামগ্রিক পরিস্থিতির খণ্ড চিত্র। এরা নদী পাড়ি দিয়ে এ পাড়ে এসেছে বলে তাদের মুখ থেকে জানা গেল। এরবাইরে বৃহত্তর একটা শ্রেণির মানুষ আছে সেখানে যারা না পারছে বের হতে, না পারছে কিছু করে নিয়ে যেতে। অনেকেই আছে বিবিধ সামাজিক সীমাবদ্ধতায় কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। নদীর পাড় ঘেঁষে তালবাড়ি-রাজাগঞ্জের বাসিন্দাদের অনেকেই গরিব। অনেক পরিবারে আছে প্রবাসী, তারা অবশ্য সচ্ছল। তারাও প্লাবিত, তবে অন্যদের মতো আর্থিক দুর্দশায় নয় এমন।

গত মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর প্রভাবে যে বন্যা হয়েছিল সিলেটে, সে সময়ও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জের মতো কানাইঘাটও প্লাবিত হয়েছিল। বানের পানি নামতে না নামতেই এবার ফের বন্যা এসেছে। আষাঢ়ের আগ থেকে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে, সবচেয়ে বড় কথা উজানে, তাতে এবারের এ বন্যায় দীর্ঘ হচ্ছে। উজান বলতে আমরা বুঝে থাকি ভারতকে। ভারতের পানি বরাক হয়ে সুরমা-কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিপ্রবাহের এই সময়ে প্লাবনে ঢাকা পড়ে সিলেট বিভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এ পানিকে গণমাধ্যম বলে পাহাড়ি ঢল অথবা উজানের পানি, স্থানীয়দের কাছে এটা ভারতের পানি বা বিদেশি পানি। এজন্যে সিলেটে যত বৃষ্টিই হোক এটাকে স্থানীয়রা বন্যা বলার চাইতে ‘মেঘের পানি’ বলতেই আগ্রহী। চড়া ভাইদের কাছেও এবারের এই পানিও তাই বিদেশি পানি।

সিলেট বিভাগের অনেক উপজেলা এরইমধ্যে বন্যায় প্লাবিত। সিলেট নগরও প্লাবিত, জলাবদ্ধতায়। অতিবৃষ্টির প্রভাবে নগরের বেশিরভাগ এলাকা ঈদের দিনে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। সঙ্গে আছে সুরমার পানি বিভিন্ন ছড়া বা খাল দিয়ে নগরে প্রবেশ। কেবল সিলেট শহরই নয়, সুনামগঞ্জ শহরেও পানি প্রবেশ করেছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভারতের পানিতে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, চলতি, চেলা, খাসিয়ামারা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এই ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদীর পানির উচ্চতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটের মধ্য দিয়ে যে নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে তার অন্তত তিনটি নদীর ছয়টি পয়েন্টের পানি এরইমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে মঙ্গলবার সকালের খবর। এছাড়া যেভাবে প্রতিবার ভারি বৃষ্টিতে নগর যেভাবে ডুবছে তাতে বৃষ্টি সিলেটে ভয়ের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।

সিলেট নগর কেন ডুবছে বারবার—এনিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। দুই বছর আগের বন্যার পর বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, সুরমা নদী ভরাট হওয়ার কারণে বন্যা। বলছিলেন, পানিপ্রবাহের বাধা পাওয়ার কথা। এরপর কয়েকটি জায়গায় নদী খনন কাজের শুরু হয়েছিল, কিন্তু কাজ শেষ হয়নি দুই বছরেও। নগরে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছিল অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের দীর্ঘসূত্রিতা এবং পানিপ্রবাহের বাধা থাকার কথা। কারণগুলো কারণ হিসেবেই থেকেছে, উদ্যোগ নেয়নি কেউ। ফলে সিলেটে বৃষ্টি এখন অভিশাপ হয়ে ওঠেছে।

বিদেশি পানির কারণে বন্যায় হয়তো আমাদের কোন হাত নেই, কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, কাজে দীর্ঘসূত্রিতা এবং নদী ভরাটে আমাদের হাত রয়েছে অবশ্যই। হাত রয়েছে উন্নয়নের নামে পানির স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টিতেও। এসব আমাদের কাছে যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা, ঠিক ততটা পাচ্ছে না।

সিলেটে বন্যা এখন তাই স্বাভাবিক ঘটনা। বছরে কয় বার ডুবল সিলেট, এটা এখন তেমনই বুঝি এক সংখ্যার হিসাব!

;