রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চলতি বছরে তিন দফা সিটিস্ক্যান মেশিন বিকল হয়ে পড়ে থাকার ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারি, মে ও জুলাই মাসে বিকল হয়ে পড়ে মেশিনটি। সে সময়ে কখনো ১৫ দিন আবার কখনো ২০ দিনের মধ্যে মেশিনটি চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে চতুর্থ দফায় মেশিনটি ফের নষ্ট হওয়ার দুই মাস পার হলেও তা মেরামতে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।
ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন রাজশাহী ও আশেপাশের জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। তবে এনিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তারা একে-অপরকে দোষারোপ করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না জানানোর ফলে মেশিন মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তবে হাসপাতালের রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগী-স্বজনরা রেডিওলোজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে এখানে মেশিন নষ্ট, বাইরে গিয়ে করে আনতে হবে। বিভাগে দায়িত্বে থাকায় কর্মচারী ও কর্মকর্তারা কাউকে কাউকে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামও বলে দিচ্ছেন। সেখানে (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) তাদের (রেডিওলোজি বিভাগের কর্মকর্তা) নাম বললে খরচ কম রাখবে বলেও দাবি করছেন তারা।
সেখানে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, সিটি স্ক্যান মেশিন প্রায়ই নষ্ট হয়। মাঝে মাঝে ঠিক করা হয়, আবার নষ্ট হয়। এবার কবে নাগাদ এটি মেরামত করা হবে, তাও জানেন না তিনি। সবাই জানেন বিভাগীয় প্রধান বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে হাসপাতালের একাধিক রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বললে তারা ক্ষোভ জানান। তৌফিক ইমাম নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘রামেকে সিটিস্ক্যানে চার্জ ২ হাজার টাকা। বাইরে গেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ করে।
মোতাহার হোসেন নামে এক ব্যক্তি এসেছেন তার মেয়ের সিটিস্ক্যান করাতে। তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগে এসে জানতে পারেন, মেশিন নষ্ট। বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে স্ক্যান করাতে হবে। এনিয়ে অপারেটরের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন তিনি।
জানতে চাইলে মোতাহার বলেন, ‘মেশিন তো নষ্ট আছেই, তার ওপর সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে ঠিক মতো কথাও বলতে চাইছেন না অপারেটররা। আমি বুঝতে না পেরে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর জানতে পারি, ভেতরে মেশিন নষ্ট। আমার বিশ্বাস- নিশ্চয় এর মধ্যে বড় ধরনের ঘাপলা রয়েছে।’
রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি শুনেছি যে আমাদের সিটি স্ক্যানটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তবে কেন এখনও তা মেরামত করে রোগীদের সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে না, তা আমার চেয়ে রেডিওলোজী অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান ভালো বলতে পারবেন। হয়তো তিনি গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বলেননি। বললে তো হয়ে যাওয়ার কথা।’