ফাঁসির রায় হওয়ার পর আসামিদের যে সেলে রাখা হয়, তা কনডেম সেল হিসেবে পরিচিত। বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যা মামলার রায় হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রেজিস্টার খাতায় নাম লেখানোর পর কারাবিধি অনুসারে তাদেরও কয়েদির পোশাকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে কনডেম সেলে স্থানান্তর করার কথা।
তবে এ মামলার ১৪ আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হলেও দুইজন আসামির ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। আসামি কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন সম্পা/চম্পার ক্ষেত্রে এই ব্যতিক্রম। নারী আসামিদের জন্য ফেনী জেলা কারাগারে আলাদা কনডেম সেল না থাকায় মহিলা ওয়ার্ডে অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে তাদের।
অন্যদিকে এক মাস বয়সী শিশু সন্তান থাকায় কয়েদির পোশাক পরতে হয়নি আসামি মনিকে। সন্তানের কারণে কিছু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন নুসরাত হত্যার অন্যতম এই আসামি।
ফেনী জেলা কারাগারে একটি দুই তলা বিশিষ্ট ভবনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য কনডেম সেল রয়েছে ৮টি। এই ৮ সেলের ৪টিতে রাখা হয়েছে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামিকে। ওই কনডেম সেলের চার রুমে যথাক্রমে ৮ নম্বর সেলে ৩ জন, ৭ নম্বর সেলে ৩ জন, ৬ নম্বর সেলে ৩ জন এবং ৫ নং সেলে ৫ জনসহ মোট ১৪ জনকে রাখা হয়েছে।
ফেনী জেলা কারাগার সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হওয়ায় জেলা কারাগারগুলোর নতুন ভবনগুলোতে মহিলা কনডেম সেল নেই। তাই তাদেরকে সাধারণ মহিলা ওয়ার্ডেই রাখা হয়।
নবজাতক সন্তানের মা হওয়ায় একটু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন কামরুন নাহার মনি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তিন বেলা পুষ্টিকর খাবার দেয়া হচ্ছে তাকে। তাছাড়া একজন সাধারণ বন্দী যেখানে তিনটি কম্বল পান। সেখানে তিনি তিনটি কম্বলের পাশাপাশি একটি ম্যাট্রেসও পেয়েছেন। তার সঙ্গে চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ সেবা তো রয়েছেই।
নুসরাত হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উম্মে সুলতানা ওরফে পপি অন্য সকল বন্দীদের মতো খাবার পাচ্ছেন। অন্যদিকে কনডেম সেলে থাকা ১৪ আসামি কারা কর্তৃপক্ষের গভীর নজরদারিতে থাকলেও তারাও খাবার পাচ্ছেন অন্য সকল বন্দীদের মতোই।
তাদের খাবার তালিকায় সকালে থাকছে রুটি ভাজি বা রুটি হালুয়া অথবা খিচুড়ি। দুপুরে খাবার তালিকায় থাকছে ডাল সবজি ভাত। আর রাতে ডাল সবজি ভাত, মাছ অথবা মাংস। তবে তাদের এই খাবারগুলো প্রত্যেকবারই চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করে দেওয়া হয়।
নুসরাত হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড ১৬ আসামি হলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুরু উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে ফেনী জজ কোটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন-উর-রশিদ নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৬ জনের ফাঁসির রায় দেন।