জিসিসি নির্বাচন: ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ

, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | 2023-08-27 07:45:08

ঢাকা: মঙ্গলবার (২৬ জুন) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহু কাঙ্খিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা যেমন ইসির জন্য 'এসিড’ টেষ্ট তেমনিভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও প্রেস্টিজ ইস্যু। কেননা, এই নির্বাচনই বলে দেবে জাতীয় নির্বাচনের কোন পথে যাবে তার ভবিষ্যৎও। 

ইতোমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু যাদেরকে ঘিরে আয়োজন, সেই ভোটারা আদৌ কতটা স্বত:স্ফুর্ত।

ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন তো? সময় যতই গড়াচ্ছে এই প্রশ্ন বড় করে দেখা দিয়েছে।নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষতরাও মনে করছেন জিসিসি নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

’ভোট চুরি ও ভোট ডাকাতি করে কেউ জিততে পারবে না। আমরা এই চুরির দায় নিতে চায় না। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়, নির্বাচন নিয়ে যেন কেউ কথা বলতে না পারে।’ সম্প্রতি গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন বক্তব্য দেন।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ’ভোটাররা ভোট দিতে না এলে দায় আপনাদেরকেই নিতে হবে।’

এর পরদিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, অন্যথায় ইসির পদত্যাগ করতে হবে। এমনকি তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ’ভোট’ প্রয়োগে আহবান জানান। 

প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেখানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন দেয়া হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী পরিবেশ ইতোমধ্যে বৈরী হতে শুরু করেছে। পোলিং এজেন্টদের ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপি থেকে অভিযোগ আছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ তাদের সকল নেতাকর্মীদের কেন্দ্র গুলো দখলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সুতরাং সরকার যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে ভোট সুষ্ঠু হবে না। শুধু তাই নয়, ভোটাররা কতটা স্বতস্ফুর্তভাবে কেন্দ্রে আসে তা বলাটা মুশকিল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় সকল কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমি মনে করি, কোন দল যদি এককভাবে নির্বাচন করতে চায় তাহলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হবে। বিশৃঙ্খলা তৈরী হলে জনগণ অর্থাৎ ভোটাররা সেখানে স্বত:স্ফুর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে আসবে না।

ইসি, পুলিশ প্রশাসন ও সকলে মিলে চেষ্টা করছে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার। তবে ঝুঁকি থাকলে কেউ জীবন বাজি রেখে ভোট দিতে আসবে না। এজন্য ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনাই হলো বড় চ্যালেঞ্জ- এ সিটি নির্বাচনে বলে জানান তিনি।

আগামীকাল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে যে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে জনগণ অবাধে পছন্দানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এমন কোন পরিবেশ এখনও দৃশ্যমান নয়। জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা আরও গভীরতর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।

আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বার্তা২৪কে বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। তবে আমরা চেষ্টা করছি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে। জনগণ স্বত:স্ফুর্ত আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।

নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি-না তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বার্তা২৪কে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে সরকার দলীয় প্রার্থী তাদের দলীয় ক্যাডার দিয়ে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারে সেজন্য নানা ফন্দি ফিকির তারা করছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নেতাকর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আশা করছি সরকার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করবে। এমনটি হলে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর