জাতিসংঘে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহার বিষয়ে বাংলাদেশের উত্থাপিত রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এতে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও সুনিপুণ ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’র পথ পাকা হলো। এতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৈশ্বিক বাজারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের পাটচাষি ও পাট ব্যবসায়ীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের চলতি ৭৪তম সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশনটি গৃহীত হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে। রেজুলেশনটির শিরোনাম ‘প্রাকৃতিক তন্তু উদ্ভিজ্জ ও টেকসই উন্নয়ন।’
এর আগে, বাংলাদেশ এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রেজুলেশনটি দ্বিতীয় কমিটিতে উত্থাপন করে। দীর্ঘ প্রায় তিন মাস টানা নেগোসিয়েশনে (আলাপ-আলোচনা) পক্ষে-বিপক্ষের মতামতসমূহকে বিবেচনায় নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশ সকল সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে এ রেজুলেশন গ্রহণের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। ভারত, চীন, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, মিশর, নাইজেরিয়াসহ ৬৮টি দেশ রেজুলেশনটিকে কো-স্পন্সর করে।
এটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম রেজুশেলন যেখানে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে লাভজনক কৃষি পণ্য পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্যতা তুলে ধরা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে প্রাথমিকভাবে রেজুলেশনটিতে পাট এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তু যেমন অ্যাবাকা, কয়ার, কেনাফ, সিসাল, হেম্প ও রামি এর ব্যবহার ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে যা এতদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রায় অজানাই ছিল।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'রেজুলেশনটি গ্রহণের ফলে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, উন্নয়ন ও সহযোগিতার পথ সুগম হবে এবং এর প্রচলিত ব্যবহারের বাইরে সৃজনশীল ও মূল্য সংযোজিত ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।'
রেজুলেশনটি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ কিভাবে উপকৃত হবে তা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে সংক্ষেপে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। তিনি বলেন, 'রেজুলেশনটি পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুজাত পণ্যের জন্য একটি শক্তিশালী, কার্যকর ও সুনিপুণ 'গ্লোবাল ভ্যালু চেইন'র পথ পাকা করল। এরফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৈশ্বিক বাজারে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের পাটচাষি ও পাট ব্যবসায়ীরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।'
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরা। সকল দেশকে এক্ষেত্রে একীভূত করতে অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুগুলোকেও আমরা নিয়ে এসেছি। প্রথমবারের মতো এ ধরণের রেজুলেশন পাস করাতে এই আন্তর্জাতিক সমর্থন আমাদের প্রয়োজন ছিল।'
এটি প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের সুবিধা আর কৃত্রিম তন্তু যেমন প্লাস্টিক ব্যবহারের অসুবিধা তুলে ধরার মাধ্যমে পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখবে। এতে সদস্য দেশসমূহকে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিষয়ে নতুন নতুন আইন, নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ।
রেজুলেশনটি আগামী ডিসেম্বর মাসে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে। এখন থেকে দ্বিবার্ষিকভাবে এ রেজুলেশনটি জাতিসংঘে আলোচিত হবে বলে জানা গেছে।