রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর অভিজাত এলাকার লেক পাড়ে হলি আর্টিজান বেকারির অবস্থান। দেশের অভিজাত শ্রেণীর মানুষ ও বিদেশিদের আনাগোনায় মুখর থাকত এই রেস্তোরাটি।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে স্প্যানিশ এ রেস্তোরায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। সে রাতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
হামলার শুরু:
২০১৬ সালের পহেলা জুলাই (শুক্রবার) রাত পৌনে ৯টার দিকে নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা উপেক্ষা করে অতর্কিত গুলি করতে করতে হলি আর্টিজানে ঢোকেন পাঁচ যুবক। এ সময় হামলাকারীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে দুই কনস্টেবল ও এক পথচারী আহত হন। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে রেস্তোরাটি ঘিরে ফেলে।
রাত তখন ১০টা:
রাত ১০টা থেকে টানা ৩৫ মিনিট গুলির শব্দ শোনা যায় হলি আর্টিজান বেকারির ভেতর থেকে। পরে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে রেস্তোরার ভেতর থেকে হামলাকারীরা হলি আর্টিজানের বাইরে থাকা র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে দু’টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসি রবিউল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তারা।
হামলাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা:
রাত ১১টার দিকে র্যাবের পক্ষ থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভেতরে অন্তত ২০ জন বিদেশিসহ কয়েকজন বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন। ভেতরে যারা আছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিপথগামী হামলাকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’
রাত ১২টায় ঘটনাস্থলে সশস্ত্রবাহিনী:
রাত ১২টায় পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে অভিযানে অংশ নিতে ঘটনাস্থলে আসে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনী সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে সাধারণ লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়।
নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা:
রাত দেড়টার দিকে খবর আসে, জঙ্গিরা ভেতরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। জঙ্গিরা রাতেই ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের ও একজন ভারতীয় নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। গুলি করে ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। আর এরই মধ্যে আইএসের সঙ্গে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার খবর আসে।
‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’র শুরু এবং শেষ:
রেস্তোরার ভেতরে থাকা জিম্মিদের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতভর জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ না করায় ২ জুলাই সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ শুরু করা হয়। অপারেশন শুরুর মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। অভিযানের মাধ্যমে একজন জাপানি, দু’জন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ১২ ঘণ্টার এ জিম্মি ঘটনায় নিহত হন ২৪ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া একজন বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক, দু’জন সাধারণ নাগরিক, হলি আর্টিজানের দুই কর্মচারী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য।