সশ্রদ্ধ অভিবাদন, প্রিয়যোদ্ধা, প্রিয় স্বদেশ

ঢাকা, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 16:53:32

নতুন শপথে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সেদিন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে, উঠেছিলো লাল সূর্য! রক্তাক্ত রণাঙ্গন পেরিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত সূর্যোদয় এনেছিল স্বাধীনতার উজ্জ্বলতম দিন।

প্রতিদিনের মতো আজও পূর্বাকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে উদিত হয়েছে লাল সূর্য। সে সূর্যের রাঙা আলো মনে করিয়ে দেয় ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের নদী আর সম্ভ্রম হারানোর সহস্র মা-বোনের ক্রন্দন ছুঁয়ে-আসা বিজয়ের বার্তা।

১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ফিরে এসেছিল সেই সূর্য আবার ১৯৭১ সালে। আজ ৪৮ বছর আগে উদিত হয়েছিল ঠিক এমনই দিনে। বিজয়ের পাশাপাশি সেদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ জুড়ে ছিল শোকের ছায়া, পথে-ঘাটে ছিলো লাশের স্তুপ! সাগর সমান প্রবহমান রক্ত গিয়ে মিশেছিল নদীমাতৃক বাংলাদেশের বহমান কোনও কোনও নদীতে।

দেশজুড়ে ছিল সন্তানহারা মায়ের চোখে বেদনার অশ্রুজল। বাবা হারা, সন্তানহারা, স্বামী-স্ত্রী হারা বাংলার মানুষের মনে ছিল না সুখ। দেশের আঁধার কেটে আলো আসবে, এই আশায় ব্যথিত হৃদয় নিয়ে নিষ্পলক চোখে অপেক্ষায় ছিল বাঙালি নিপীড়িত জনতা।

দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশে এমন পরিবেশে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন শপথে পূর্বাকাশে উদয় হয়েছিল বিজয়ের লাল সূর্য। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে, শত্রু ঘাঁটি পুড়িয়ে বাংলার মানুষ বিজয় নিশান উড়িয়ে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতার এই সূর্য। লাখো শহীদের রক্তে রাঙা রক্তিম লাল সূর্যের সঙ্গে জন্ম নিয়েছিল বিশ্বের বুকে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র-বাংলাদেশ।

বিজয়ের সেই লাল সূর্য যেমন মিশে আছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও শৃঙ্খল মুক্তির প্রতীক লাল পতাকায়, তেমনি মিশে আছে বাঙালির চেতনায়, মননে, আত্মায়, সত্ত্বায়। সেই থেকে লাল-সবুজের পতাকার মধ্যে থাকা সূর্য, আর দূর আকাশে থাকা সূর্য-দুটোই বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসার নিজস্ব সম্পদ।

বাংলাদেশ সৃষ্টির সুদীর্ঘ ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ঝাপিয়ে পড়ে গোটা জাতি। ৯ মাসের রক্তাক্ত এক অধ্যায় শেষে শীতের পড়ন্ত বিকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিজয়ী বাঙালি। সেই পতাকা উঁচিয়ে প্রগতির পথে চলেছে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের দুর্জয় বাঙালির অভিযাত্রা।

তবে এ অর্জনের বেদীতে বিসর্জন দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম। বহুমাত্রিক লেখক ও কবি হুমায়ুন আজাদ তার কবিতায় বিজয় অর্জনের পেছনে সেই বিসর্জনের কথা তুলে ধরেছেন এভাবে-
‘... সারা বাংলা রক্তে গেছে ভিজে/যে নদীতে ভাসতো রাজহাঁস সেখানে ভাসছে শুধু নিরীহ বাঙালির লাশ।'

বিজয়ের ৪৮ বছর পেরিয়ে আজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর পথে আগুয়ান ।বাঙালির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কাঙ্ক্ষিত দিনে, মহান বিজয় দিবসে জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। যাদের রক্ত আর সর্বোচ্চ ত্যাগে এসেছে মুক্তির বার্তা, অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, তাদের রক্তিম সালাম। সশ্রদ্ধ অভিবাদন, প্রিয়যোদ্ধা ও বাঙালির প্রিয় স্বদেশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর