দুবাই থেকে ফিরে: স্বপ্নের শহর দুবাই! না, নিছকই কোনো কথার কথা নয় এটি। গোটা বিশ্বের মানুষের কাছেই দুবাই ‘ড্রিম ডেস্টিনেশন’। হবেই না কেন-অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যাতায়াত ব্যবস্থা, নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত ও আকাশচুম্বি ভবন-সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশসংযুক্ত আরব আমিরাতের এই শহরটি বাস্তবিকই পর্যটকদের কাছে অতি জনপ্রিয় এক গন্তব্য।
শুধু পর্যটক নয়, অভিবাসী শ্রমিকদের কাছেও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থল মধ্যপ্রাচ্যের অত্যাধুনিক ব্যয়বহুল শহরটি। তবে আরব আমিরাত সরকার কর্মী নিয়োগে বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশটির শ্রমবাজার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য প্রায়ই বন্ধ বলা চলে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র দুবাই একসময় পরিচিত ছিল মরুর শহর বলে। এখন দুবাইয়ের প্রতিটি শহরে রয়েছে নিজ নিজ সৌন্দর্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। সেখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য আকাশ ছোঁয়া ভবন যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র। আরব সাগর বেষ্টিত দুবাইয়ে রয়েছে অনেকগুলো সমুদ্র সৈকত। সৈকতগুলোতে বছরজুড়ে ভ্রমণ বিলাসী মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকে।
ভাগ্যচক্রে মধ্যপ্রাচ্যের স্বর্গরাজ্য দুবাই ভ্রমণের সুযোগ মিলল আমারও। ভ্রমণপ্রিয় এডিটর ইন চিফ শ্রদ্ধেয় আলমগীর হোসেনের তত্ত্বাবধানে কাজ করলে কল্পনাকেও হার মানানো এমন সুযোগ আসবে অবধারিতভাবেই!
দুবাই যাত্রার আগে এডিটর ইন চিফ পাসপোর্ট ছাড়া ভিসার কপি যখন হাতে ধরিয়ে দিলেন তখন বিস্ময়ের পাশাপাশি চিন্তায়ও পড়লাম! যাই হোক, হালকা ভয়কে সঙ্গী করে অনলাইন ভিসার কপি নিয়ে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে যাই।
সেখানে হোঁচট খেলাম! কাউন্টার থেকে ইমিগ্রেশনের ওই কর্তা জানিয়ে দিলেন ট্যুরিস্ট ভিসা? সোজা ওই গোল পিলারের কাছে যান। আমার আগে সেখানে এক নারী ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিজে একটু শঙ্কামুক্ত হতে তার সমস্যার কথা জানতে চাইলাম। ভ্রু কুচকে ওই নারী জানালেন, ট্যুরিস্ট ভিসা তাই এখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখান থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই বলেনি।
ধু ধু মরুভূমিতে স্থাপনাশৈলীর বিস্ময় দুবাইয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বাধাহীনভাবে ঘুরতে যাচ্ছে। আর সেখানে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে রয়েছে নানা ঝক্কিঝামেলা। তারই প্রমাণ পেলাম যাত্রার শুরুতেই।
দৈবক্রমে আমার খুব একটা অপেক্ষা করতে হলো না! ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক এ কে আজাদের হাতে পাসপোর্টটি দিলাম। নামটি অবশ্য ইউনিফর্মের নামফলক দেখে নিশ্চিত হয়েছি। পাসপোর্ট হাতে নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন কেন যাবেন? কোন কোন দেশ গেছেন? প্রতিউত্তরে কয়েকটি দেশের নাম বলতেই জানতে চাইলেন-ব্যবসা করেন? বললাম ব্যবসা করি না, সাংবাদিক। এরপর আর কোন কথানা বলেই পাসপোর্টের সঙ্গে দেওয়া ফরমে ‘ওকে’ লিখে পাঠিয়ে দিলেন কাউন্টারে।
এরপর কাউন্টার থেকে পাসপোর্ট স্ক্যান করে বললেন আপনি তো সাংবাদিক? বললাম হ্যাঁ। আরকোন প্রশ্ন নেই। তবে আমার আগে যে নারী ওই পিলারের কাছে ছিলেন তাকে আর ছাড়লেন না। পরে জানতে পেরেছি তার কাছে বাড়তি টাকা চাওয়া হয়েছিল।
এভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে যারা ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশ যাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়।
সব প্রক্রিয়া শেষে এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে যখন দুবাইয়ে উদ্দেশে উড়াল দিলাম। তবে ঢাকা বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা মনের ভেতর অজানা শঙ্কা তৈরি করে। না জানি শারজাহ বিমানবন্দরে কী হয়!
শারজাহ বিমানবন্দরে একবারেই ভিন্নচিত্র। প্রথম স্মার্ট গেটে গেলাম। সেখানে পাসপোর্ট স্ক্যান মেশিনে দেওয়ার পর কোনো রিপ্লাই আসছে না, ভয়টা বেড়ে গেল। এরপর একজন ভদ্র মহিলা ইমিগ্রেশনের অফিসার এসে তিনিও আমার পাসপোর্টটি মেশিনে দিলেন সংকেত আসে না। এবার একটু ঘাবড়ে গেলাম! ভাবলাম আমার যাত্রা এখানেই শেষ।
পরে ওই ভদ্র মহিলা বললেন ‘গো টু ইমিগ্রেশন’। এরপর ইমিগ্রেশনে গেলাম। সেখানে নেই কোন দীর্ঘ সারি, নেই কোনো বাড়তি ঝামেলা। পাসপোর্টটি দিতেই মেশিনে স্ক্যান করে একটি সিল মেরেজানিয়ে দিলেন ‘ওকে’। আমি তখন তাজ্জব হয়ে গেলাম। একটি কথাও জিজ্ঞেস করলেন না। হোটেল বুকিং, ডলার এনডোর্সমেন্ট কোন কিছুই না। অথচ কত না চিন্তায় ছিলাম।
যত ঝামেলা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তার অবশ্য একটি কারণ জানা গেল ভিজিট ভিসায় অনেকেই দুবাইতে গিয়ে অবৈধ শ্রমিক হিসেবে রয়ে যান। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়- এজন্যই যত কড়াকড়ি।
কিন্তু প্রবাসীদের কথা ভিজিট ভিসা যদি সমস্যাই হতো তাহলে তো দুবাই সরকার ভিসা দিত না।তারা তো ভিসা বন্ধ করেনি, করেছে আমাদের দেশের ইমিগ্রেশন।
দুবাই প্রবাসী সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুবাই সরকার তো ভিসা বন্ধ করেনি। আমাদের দেশের বিমানবন্দরেই যত ঝামেলা, এখানে কোন ঝামেলা নাই। ট্যুরিস্ট ভিসা যদি সমস্যার হতো তাহলে ভিসা দিচ্ছে কেন? আর বাড়তি টাকা খরচ করলেই সব ঝামেলা মিটে যায়, এটা কিভাবে হয়?--