রাত পোহালেই ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন পর্দা উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। সকাল দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার ২৫তম আসর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্বোধনের আগে মেলার অবকাঠামো নির্মাণে একেবারে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। দম ফেলার সময় নেই আয়োজক, স্টল মালিক ও নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সবাই যার যার কাজে মগ্ন। সকালের আগেই যে সব যজ্ঞ সম্পন্ন করতে হবে।
শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ওয়ালটনের স্টলের দায়িত্বে থাকা আবু সুফিয়ান জানান, বরাবরের মতো এবারও দুটি স্থল থাকছে তাদের। বহুতল এই স্টলগুলোর শেষ সময়ের কাজ চলছে। যতটুকু কাজ বাকি আছে তা আজ রাতের মধ্যে শেষ হবে।
বিদেশি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্রিমিয়ার স্টলগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই। স্টল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের এখন শুধু পণ্য সাজানো বাকি।
মেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতি দেখতে এসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এবার মেলার অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ২৩ কোটি ১৬ লক্ষ ২০ হাজার ২৮১ টাকা। পূর্বের তুলনায় কমানো হয়েছে স্টল সংখ্যা। তবে টয়লেট, পানির ট্যাংকসহ ও খাবার হোটেলের সুবিধাসহ বাড়ানো হয়েছে বিনোদন স্পেস। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৫ তম আসরে দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে মোট স্টল সংখ্যা ৪৮৩টি।
এর মধ্যে সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১৩টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৯টি, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬৪টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৪৩টি, রেস্তোরাঁ ২টি, স্ন্যাক্স বুথ ৭টি, প্রিমিয়ার স্টল ৮৪টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৭টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৮টি, সাধারণ স্টল ১০৭ টি, ফুড স্টল ৩৬টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি, বিদেশি প্রিমিয়ার স্টল ১৭টি।
এবারের মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বের তুলনায় এবারের প্যাভিলিয়ন বড়, সুন্দর, নান্দনিক ও ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। মেলায় নেওয়া হয়েছে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরা সম্পূর্ণ মেলা পর্যবেক্ষণে থাকছে। মেলার নিরাপত্তার সুবিধার্থে মোট দশটি ওয়াচ টাওয়ার থাকছে।
১২৮ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকছেন। রয়েছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। চারটি প্রবেশদ্বার, মেলা প্রাঙ্গণের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুটি অস্থায়ী ফোয়ারা, ২০০ অস্থায়ী ডাস্টবিন থাকছে।
মেলায় শিশুদের বিনোদনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি শিশু পার্ক। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের পণ্যের প্রচার ও বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রচারণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করা হয়েছে, যারা অডিও ভিজুয়াল এর মাধ্যমে এসব প্রচারণায় অংশ নেবেন। সহজেই কেনাকাটা ও লেনদেনের জন্য রাখা হয়েছে ৬টি এটিএম বুথ। থাকবে ডিআইটিএফ সচিবালয় ও বাণিজ্য তথ্যকেন্দ্র। মেলার মাঠে সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে থাকবে পনেরোটি অর্কিড ফুলের বাগান। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ও জেনারেটর।
মেলায় আগত মা ও শিশুদের পরিচর্যার সুবিধার্থে দুটি মা ও শিশুকেন্দ্র স্থাপন করাসহ স্থাপন করা হয়েছে ৮০ টি পুরুষ ও মহিলা টয়লেট।
অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে সার্বক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নিয়োজিত থাকবে মেলায়। মেলা মাঠে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুবিধার্থে চারটি অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলাকে ডিজিটাল উপস্থাপনার জন্য মেলায় দুইটি ভিজিবল ডিজিটাল সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-টিকেটিং এর মাধ্যমে অনলাইনে ২৫ পার্সেন্ট টিকেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার রক্ষার্থে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে এবারের মেলায়। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধার্থে মোট চারটি গাড়ি পার্কিং জোন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের সহজে টিকেট কাটার সুবিধার্থে মেলার প্রধান গেটের দুপাশে এবং দ্বিতীয় গেটের একপাশে সর্বমোট চল্লিশটি কাউন্টার থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে থাকছে ডিআইটিএফ টাওয়ার। এছাড়া আরও তিনটি টাওয়ার থাকবে।
মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট ,কসমেটিকস এন্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী চামড়া/আর্টিফিশিয়াল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক সামগ্রী, মেলামাইন সামগ্রী, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ঘড়ি, হোম, অ্যাপ্লায়েন্স, ইমিটেশন, জুয়েলারি, সিরামিকস, টেবিলওয়্যার, কেবল, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, আসবাবপত্র ও হস্তশিল্পজাত পণ্যসহ উপহার সামগ্রী, কনস্ট্রাকশন সামগ্রী, বেকারি পণ্য, বিদেশি বস্ত্র প্রদর্শন ও বিক্রি হবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় বিগত তিন বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালে রফতানি পরিমাণ ছিল মার্কিন ডলার ৩ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন, ২০১৮ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল মার্কিন ডলার ১৯ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন এবং ২০১৯ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল মার্কিন ডলার ৩৫ দশমিক ৫০ মিলিয়ন।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৫তম আসরে বিশ্বের ২১ টি দেশ তাদের পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করছে। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, দুবাই, ইতালি ও তাইওয়ান।
এবছর মেলায় প্রবেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য আগের মতোই ২০ টাকা রাখা হয়েছে।
১ জানুয়ারি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জনাব শেখ ফজলে ফাহিম উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।