ঝালকাঠিতে বৈদ্যুতিক খুঁটির (খাম্বা) পরিবর্তে রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন গাছের সঙ্গে অ্যাঙ্গেল দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল লাইন সংযোগ। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে মেহগনি, তাল, চাম্বল ও রেইন্ট্রি গাছসহ অনেক প্রজাতির গাছ।
খাম্বা না থাকায় বৃষ্টি বা মাঝারি ধরনের বাতাস বইলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় এলাকাবাসীর।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন তারা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলেও সমস্যার সমাধান পাননি ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নলছিটি উপজেলার পৌর শহরের হাসপাতাল সড়ক, বিআইপি কলোনি, সবুজবাগ, মালিপুর, নাঙ্গুলী, বৈচণ্ডী, মাটিভাঙা, সূর্যপাশা, সারদল, নান্দিকাঠি ও পোস্টঅফিস এলাকার গাছে গাছে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে লাইন স্থাপন করেছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
এমন চিত্র আরো দেখা গেছে, পৌর শহরের পার্শ্ববর্তী দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি, পূর্ব দপদপিয়া গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।
কোথাও দেখা গেছে, গাছের সঙ্গে লাগানো অ্যাঙ্গেলে ঝুলছে বৈদ্যুতিক জিআই তার। আবার কোথায় র্যাক ছাড়াই এসব তার দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ।
জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এক কোটি টাকা ব্যয়ে 'সম্প্রসারণ ও পরিবর্ধন প্রকল্পের' আওতায় এ এলাকায় নিরাপদ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
এ প্রকল্পের আওতায় ১২ মিটারের ৮১০টি হাই টেনশন (এইচটি) এবং ৯ মিটারের ৫৫২টি লো-টেনশন (এলটি) পাকা খুঁটি স্থাপনের কথা রয়েছে। ৬ মাসমেয়াদী প্রকল্পের আওতায় এসব খুঁটিতে ১০০ গজ দূরত্বে মার্লিন তার দিয়ে ৪০ কিলোমিটার এবং ওয়াসপ তার দিয়ে ৩২ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রকল্পের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত ৬ মাস শেষ হলেও ঠিকাদারের অবহেলায় নতুন খুঁটি স্থাপন ও সরবরাহ লাইনের কাজ শেষ হয়নি ৪০ শতাংশও।
বর্তমানে স্থাপন করা হয়েছে ৪২০টি এলটি এবং ৫৬০টি এইচটি খুঁটি। তবে ওই খুঁটিগুলোতে এখনও বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইন দেওয়া হয়নি।
আরো জানা গেছে, দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজটি পেয়েছিল খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রকি কনস্ট্রাকশন। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কাজটি কিনে নেয় আবার আজাদ ট্রেডিংয়ের মালিক মাসুম মল্লিক। যিনি নলছিটির বাসিন্দা। গত বছরের জুলাই মাসে কাজ শুরু করেন তিনি।
নলছিটি পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, তার বাসার আশপাশে এবং পার্শ্ববর্তী থানারপুল ও বিআইপি কলোনিতে গাছের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের তার রয়েছে। তারা একাধিকবার স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে খুঁটি স্থাপন করে নতুন সরবরাহ লাইন দেওয়ার অনুরোধ করেছেন, তবে এতে কোন কাজ হয়নি। অথচ পৌর শহরের চায়না মাঠে শতশত পাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে আছে।
ঠিকাদার মাসুম মল্লিক বার্তা২৪.কম বলেন, এ ধরনের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কমপক্ষে দেড় বছর সময় প্রয়োজন। তবে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস। এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব করেছেন। নতুন করে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে কাজে কোনো ত্রুটি হচ্ছে না বলেও দাবি এই ঠিকাদারের।
নলছিটির ওজোপাডিকোর প্রকৌশলী মো. ফিরোজ সন্যামত বার্তা২৪.কমকে জানান, ঠিকাদারকে অনেক অনুরোধ করেও প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী কাজ শেষ করাতে পারেননি তিনি। প্রকল্পের তিন ধাপের কাজের মধ্যে শুধু প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, নলছিটি পৌর শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নে চলমান প্রকল্পটির অনেক কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তবে এ অবস্থায় মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ঠিকাদার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। সময় বাড়ানো হলে প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ শেষ হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।