বরগুনায় কলেজ রোডে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি দেশব্যাপী মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। রিফাত ছিল বাবা-মার একমাত্র ছেলে।
রিফাতের নিথর মরদেহ দেখে দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। পরিবারে রয়েছেন হার্টে রিং বসানো বাবা দুলাল শরীফ, বাতজ্বরে আক্রান্ত মা ডেইজি বেগম আর একমাত্র অনার্স পড়ুয়া বোন ইসরাত জাহান মৌ।
এখনো রিফাতের কবর জিয়ারত আর রাতভর কান্না করে প্রতিদিন বুক ভাসান মা-বাবা। ছেলের মৃত্যুর পর থেমে যায় দুলাল শরীফের কৃষি নির্ভর সংসার। নিজের জমি আবাদ করে ধান-চাল বিক্রি করেই চলছে জীবন-সংসার৷
তারপরও বাঁচার তাগিদে প্রতিমাসে ১৫/১৬ হাজার টাকার ঔষধ কিনে খেতে হয় রিফাতের মা-বাবার। ছোট মেয়ে মৌ-এর লেখা-পড়ার খরচ চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে রিফাতের বাবার।
রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বার্তা২৪.কম-কে জানান, রিফাতের মৃত্যুর পর দিনে দিনে বিভিন্ন ভাবে খরচ বেড়ে গেছে। তবে আয়ের উৎস কমে গেছে। সব মিলে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট ।
তিনি আরও জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডের মামলা চালাতে কোন খরচ না লাগলেও যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবুও ছেলের হত্যার দ্রুত ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশাবাদী এই পিতা।
রিফাতের মা ডেইজী বেগম সাংবাদিকদের জানান, ছেলের হত্যার পেছনে মিন্নিকে দায়ী করে সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
রিফাতের বোন ইসরাত জাহান মৌ জানান, নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে ভাই রিফাতের সঙ্গে মিন্নির প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর জেরে ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়।
চলতি মাসের ৮ জানুয়ারি চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে রিফাত হত্যা মামলার বিচারকার্য শুরু হয়। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞ আদালত এ হত্যা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে খুশি ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নিহত রিফাতের পরিবার।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ আর যোগ্যতা অনুযায়ী রিফাতের ছোট বোন ইসরাত জাহান মৌ’র একটা চাকুরীর দাবি রিফাতের পরিবারের ।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার সর্বশেষ বিচারকার্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বার্তা২৪.কম-কে জানান, আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়।
ইতোমধ্যে রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ২৪ আসামির মধ্যে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
এর আগে গেল বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন।
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে জখম করা হয় শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে। বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাতের মৃত্যু হয়।
রিফাতকে কোপানোর ঘটনার ভিডিওটি ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে তা পুরো দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। রিফাত হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।