ঝালকাঠীর নলছিটি থেকে ফিরে: ঝালকাঠী জেলার নলছিটি পৌরসভাটি দেশের অতি প্রাচীন এবং ২য় পৌরসভা। ঢাকা পৌরসভার পর ১৮৬৫ সালে নলছিটি পৌরসভা গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ১৫৪ বছর অতিবাহিত হলেও এই পৌরসভায় গড়ে ওঠেনি কোন বিনোদন কেন্দ্র। নেই আধুনিক হোটেল-রেস্তোরাঁ, কমিউনিটি সেন্টার, দৃষ্টিনন্দন দালান-কোঠা।
নলছিটি পৌরসভাকে দেশের বুকে পরিচয় করার মতো যেসব স্থাপনা, নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান ছিল তাও আবার সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু কিছু নিদর্শনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলো অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ফলে পৌরবাসীর ঘুরে দেখার মতো তেমন কোন জায়গা নেই। পিকনিক স্পট তো দূরের কথা নেই- কোন নিরিবিলি বসে গল্প-আড্ডা দেয়ার মতো পরিবেশ।
সরজমিনে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদ চত্বর সংলগ্ন নিবার্হী কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে প্রায় ৪ শতাংশ জমির ওপর একটি মিনি শিশু পার্ক গড়ে ওঠে। তাও আবার রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পর খেলার সরঞ্জামাদিগুলো ভেঙে যায়। পরে বর্তমান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে কোন মতে খেলার সরঞ্জামাদিগুলো সংস্কার করে পুনঃরায় শিশু পার্কটি চালু করে। এখানে একটি দোলনা, ওজন মাপা গেমসসহ কিছু সামগ্রী রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পুকুরটিরও যৌবন এখন বিলীন।
পৌরসভার মেয়র বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত বিজয় উল্লাস-৭১ নামে একটি মূর্যাল তৈরি করেন। এতে পৌর ও উপজেলাবাসীর ছবি তোলার কিছুটা খোরাক জোগায়। বধ্যভূমির নবনির্মিত স্তম্ভ হলেও শহরের এক কর্নারে হওয়ায় তা জনমুখী হিসেবে প্রকাশ পায়নি।
দেখা গেছে, ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানায় একটি দর্শনীয় বাড়ি। সেখানে কিছু ফুলগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বসার জায়গা এবং কয়েকটি হরিণ রয়েছে। যা বিনোদন পিপাসুদের জন্য যথেষ্ট নয়।
সিনথিয়া আক্তার নীতু নামে এক কলেজ ছাত্রী বার্তা২৪.কম বলেন, অন্যান্য জেলা- বিভাগ থেকে নলছিটিতে বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনদের ঘুরে দেখানোর মতো কোন জায়গা নেই। কোথায়ও বসে উন্নত মানের ভালো খাবার-দাবার করারও কোন ব্যবস্থা নাই নলছিটিতে। কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় দিনে দিনে সবাই বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছে।
মোঃ আরিফুর রহমান দীপু নামে এক প্রবাসী বার্তা২৪.কম কে বলেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় নলছিটিতে গড়ে ওঠেনি কোন বিনোদন কেন্দ্র।ফলে নলছিটির মানুষ ঝালকাঠি, বরিশালসহ অন্যান্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা নলছিটির জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতি।
তপন কুমার দাস নামে এক সংস্কৃতিজন বার্তা২৪.কমকে বলেন, নলছিটি পৌরসভা দেশের একটি প্রাচীন পৌরসভা। সে অনুযায়ী এখানে কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। নেই কোন ঘুরে দেখার মতো কোন জায়গা আর পরিবেশ। নলছিটির ইতিহাস ঐতিহ্য ফিরে আনতে প্রশাসন ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা শিকদার বার্তা২৪.কম কে বলেন, ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর উপজেলার নাম নলছিটি। সে অনুযায়ী ইতিহাসের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি।গড়ে ওঠেনি তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র। উপজেলা চত্বরে গড়ে ওঠা মিনি শিশু পার্কটিও ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। জরাজীর্ণ সামগ্রী সংস্কার করে পার্কটিকে ব্যবহার উপযোগী করবেন বলেও জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।
নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ তসলীম উদ্দিন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে জানান, নলছিটি শহরকে বসবাস উপযোগী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ তবে নলছিটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর কোনও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। কিন্তু ইতিমধ্যে শহরের পাশে সুগন্ধা নদীর পাড় ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় ২৬ শতাংশ জমির উপরে একটি পার্ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নলছিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ৷ বাজেট অনুযায়ী বরাদ্দ শুরু হবে বলেও জানান মেয়র।