ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়ায় নতুন রূপে সেজেছে খুলনা নগরী। কোকিলের কুহুতানের সাথে সাথে বসন্তের শুরুতেই যেনো ফাল্গুনকে বরণ করে নিয়েছে প্রকৃতি। শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে স্নিগ্ধ সবুজ প্রকৃতিতে নতুন কচি কচি পাতায় ঝলমলে হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। প্রকৃতিতে বসন্তের সাজ সাজ রব বইছে। এমনই সময় মনে বাজে 'আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত পাখি গায়'।
খুলনা নগরের প্রায় প্রতিটি এলাকাতে নজর কাড়ছে শিমুল, পলাশ, কনকচাঁপা, নয়নতারা, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম, গাঁদাসহ হরেক রকমের দেশী-বিদেশী ফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে স্বর্ণালী আম্র মুকুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিতে বসন্ত বার্তা ছড়াচ্ছে।
খুলনার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সারি, আবাসিক এলাকা, ছাদবাগান ও সড়কের পাশে লাল, নীল, বেগুনী, হলুদ, গোলাপি, সাদা, খয়েরী হরেক রঙের ফুলের সমাহার শোভা পাচ্ছে। ফুলের সুবাসে চারিদিক যেনো মৌ মৌ করছে। এসব নার্সারিতে শোভা পাচ্ছে কয়েকশ প্রজাতির ফুল ও গাছ। কয়েকটি এলাকায় পলাশ শিমুল ফুলও ফুটতে শুরু করেছে। রাতভর পরা হালকা কুয়াশা কাটিয়ে প্রতিদিন ভোরে সূর্যকিরণ যখনি ফুলের উপরে পরে, তখন মনে হয় যেনো ফুল থেকে হীরকদ্যুতি ছড়াচ্ছে।
হলুদ গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, লাল গাদা, আকাশি স্নোবল, বিভিন্ন প্রজাতির পাতা বাহার, গোলাপি বর্ণের ফুল, সাদা স্নোবল, সালভিয়া, দোপাটি, ক্যালেন্ডোলা, দায়েনথাঁচ, ফ্লোগর্স, ইন্টালিয়াম, স্নাকড্রাগন, পেনজি, কারিয়াফছি, ভারবিনা, পিটুনিয়া, স্টার গোল্ড, মৌচন্ডা, পানচাটিয়া, অ্যালমন্ডা, তালপাম্প, চন্দ্রমল্লিকা, একঝাড়া, রঙ, বারবিনা, স্টার, ফলিয়ক্স, নয়নতারা, কালেনগোলা, সানবিয়া, ন্যাশটোসিয়াম, পিটুলিয়া, ইসকাস্লোবাল, পানচাটিয়া, ইনকা গাদা, চায়নিজ গাদা, জাম্বুস গাদা, মোরগ ঝুঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি, টগর, বেলি, সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা, রঙ্গনসহ আরও নানা রকমের ফুল ফুটেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, খুলনা বেতার, খুলনা মেডিকেল কলেজ, বিএল কলেজ, শিববাড়ী মোড়সহ আরো অনেক স্থানে। ফুলগাছগুলোতে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে নানা রঙের প্রজাপতি।
এছাড়াও খুলনার বেশ কিছু এলাকায় এ সময়টায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে ছাদ বাগান। বসন্তের আগমনে ছাদবাগানগুলিও সেজেছে নবরূপে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা এসব ছাদবাগানে ফলজ, বনজ, ঔষধি গাছের সাথে শোভা পাচ্ছে ফুলগাছ। খুলনা যেনো এখন ফুলের শহর।
সৌখিন ছাত্র আহমদ ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর. কম কে বলেন, এখন শীত আর বসন্তের ফুল একসাথে ফুটছে। তাই চারিদিকে এত রঙ। আমি ঘরের বেলকনিতে দৃষ্টিনন্দন কিছু ফুলের গাছ রেখেছি। প্রতি সকালে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে আমার ঘর ভরে থাকে।
খুবির চারুকলার শিক্ষার্থী মৌমিতা মৌ বলেন, পুরাতন পাতা ঝড়িয়ে নতুন পত্রপল্লব দিচ্ছে গাছ। সবখানে ফুটেছে ফুল। এ যেনো বসন্তের আবহ। ফুল ফুটেছে, বসন্তও এসেছে।
নার্সারি মালিক যুবায়ের ভূইয়া বলেন, এখন ফুল গাছে ফুল ফুটছে। সবখানে যেনো বসন্ত লেগেছে। ফুল গাছের চাহিদা এখন বেশী।
খুলনা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি বদরুল আলম রয়েল বলেন, জেলার প্রতিটি নার্সারিতে নানা রকমের ফুল হয়। ফুল প্রেমীরা নার্সারিতে ঘুরের, গাছ কেনেন। অনেকে শখ করে টবসহ চারা কিনছেন। নার্সারি মালিকদের জন্য সরকারি প্রণোদনার দাবি করেন তিনি।
শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে বসন্তকালীন ফুলে ফুলে সজ্জিত হয়ে প্রকৃতি এখন জানান দিয়ে যাচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তার। শীতের রিক্ততা ভুলিয়ে ফাগুন আগুন নিয়ে বাঙালির জীবন রাঙাতে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বসন্ত। শীতের খোলস ভেঙ্গে আগুন রঙের খেলায় মেতেছে পরিবেশ। মাঝে মাঝে গ্রামাঞ্চলে কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছে।