৩ বছরে নাফ ট্যুরিজম পার্ক গড়তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 06:29:12

নাফ ট্যুরিজম পার্ক, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও মহেষখালী ইকো ট্যুরিজম পার্কের মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবগত করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সাগরতীরে সুউচ্চ ভবন না করে ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনটি পার্কের মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করেন বেজা চেয়ারম্যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি কেবলমাত্র বিদেশিদের জন্যই নির্মাণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে গড়ে তুলতে হবে। এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে অন্যান্য দেশের পর্যটকেরা এর প্রতি আকর্ষিত হয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে।

নাফ ট্যুরিজম পার্কের নির্মাণ কাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনটি ট্যুরিজম পার্কে নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়েও তাগাদা দিয়েছেন তিনি।

সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কের মাস্টার প্ল্যান তৈরির পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন যে, আগামী ২৪ মাসের মধ্যেই এখানে পর্যটকরা পরিভ্রমণ করতে পারবেন এবং পার্কটিকে সম্পূর্ণ রূপ দিতে নয় বছর সময় লাগবে।

বেজা কক্সবাজার জেলায় ৩টি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ খাত থেকে বছরে প্রায় অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বাংলাদেশে ট্যুরিজমের বর্তমান অবস্থান তিন ডিজিট (১২০তম) থেকে দুই ডিজিটে আসবে বলে মনে করছে বেজা।

বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনটি পার্কের মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপন করা হয়

নাফ ট্যুরিজম পার্ক বাংলাদেশে প্রথম দ্বীপ ভিত্তিক পর্যটন অঞ্চল, যা দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ মহাপরিকল্পনা শুধু দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশেই ভূমিকা রাখবে না, সাথে সাথে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অধিকতর অবদান রাখবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে দ্বীপভিত্তিক পর্যটন শিল্পের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও বিকাশ মূল লক্ষ্য।

নাফ ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে বিদ্যমান জলাশয় সংরক্ষণ, ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বৃষ্টির পানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, পর্যটক ও পরিবেশ বান্ধব সু্বিধাদি নিশ্চিতকরণ, বিদ্যমান জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়াদি নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

এছাড়াও সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থানীয় পর্যায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, পরিবেশগত ভারসাম্য পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনা করে নাফ ট্যুরিজম পার্ক এর বিশদ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে যা দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের পাশাপাশি বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি, স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি ও জীবন-মানের উন্নয়নসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে আশা করছে বেজা।

নদীবেষ্টিত নাফ ট্যুরিজম পার্কের আয়তন ২শ’ ৯১ একর (দ্বীপ- ২৭১ একর ও মূল ভূখন্ড- ২০ একর) যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার টেকনাফ সদর ইউনিয়নে অবস্থিত। এর উত্তর-দক্ষিণ সীমানায় নাফ নদী, পূর্ব সীমানায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং পশ্চিমে নাফ নদীর অপর প্রান্তে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন অবস্থিত। নাফ ট্যুরিজম পার্কের মূল বৈশিষ্ট্য এর ভৌগলিক অবস্থান, চারপাশে নদীবেষ্টিত দ্বীপ যা নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। নাফ ট্যুরিজম পার্ক এলাকার বিদ্যমান ভূমি ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে ৪৩ শতাংশ ভূমি উন্নয়ন এলাকা, ৪২ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান, ৯ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন এবং ৩ শতাংশ জলাশয়।

সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, বাংলাদেশে প্রথম পর্যটন নির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেই ভূমিকা রাখবে না, সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে জীব-বৈচিত্র্য, দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যটকবান্ধব মহাপরিকল্পনা প্রস্তুতকরণ এবং কক্সবাজার ও এই অঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি সামগ্রিক যোগসূত্র স্থাপন করা।

এ মহাপরিকল্পনায় সমুদ্রসৈকত সংরক্ষণ, বিদ্যমান জলাশয় সংরক্ষণ, ঝাউবন সংরক্ষণ, টেকসই উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, বৃষ্টির পানি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, দেশীয় ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ, পর্যটক ও পরিবেশবান্ধব সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ, পথচারী ও বাইসাইকেলবান্ধব সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ, বিদ্যমান জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়াদি বিবেচনা করা হয়েছে।

সাবরাং ট্যুরিজম পার্কটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত যার আয়তন ১ হাজার ৪৭ একর। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্বে শাহপরীর দ্বীপ অবস্থিত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কোলাহলের বাইরে ও বৈশিষ্ট্যগতভাবে নীল পানির কারণে স্থানটি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

সোনাদিয়াতে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব ট্যুরিজম পার্কটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্ক কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলাস্থ কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত, যা কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ২৪ কিলোমিটার এবং জলপথে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।

সোনাদিয়ার নিরীক্ষা অঞ্চলের জমির পরিমাণ প্রায় ৮৯৬৭ একর যাতে নিবিড় ম্যানগ্রোভ বন ও প্রচুর জলাধার রয়েছে । এছাড়াও এখানে দৃশ্যমান রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ। সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কের মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়ণে এই বিদ্যমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিবর্তিত রেখে পর্যটক আকর্ষণের বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করা হয়েছে।

অবসর, বিনোদন, শিক্ষা, গবেষণা, সবুজ শিল্প বিকাশের সকল উপাদান এখানে নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। জীব-বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং জাতীয় গৌরব সংরক্ষণ ও সুরক্ষার মধ্য দিয়ে এ পার্কটিকে বিশ্বমানের পর্যটন ও জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক গন্তব্যে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সোনাদিয়ায় দেশের প্রথম ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বেজা ‘মাহিন্দ্র কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স’ এবং ‘ডেভকন কনসালটেন্টস লিমিটেড’কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিযুক্ত করেছে। কক্সবাজারের আওতাধীন সাবরং এবং নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্ট এবং কোরিয়ার দোহওয়া (ডিওএইচডব্লিউএ) কনসালটেন্ট লিমিটেডকে পরামর্শক সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সোনাদিয়ায় ৮ হাজার ৯৬৭ একর জমির উপর সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কটি গড়ে তোলা হচ্ছে। যার ৯০৯ একর জমিকে কাজে লাগানো হবে এবং বাকি অংশ অটুট থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনটি পার্কের মাস্টার প্ল্যান উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো.তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

বেজা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী একমাসের মধ্যে এই মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর