বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় কৌশলী দুর্নীতি

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 19:40:26

এক পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অন্য পদের প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে পছন্দের লোকদের টেকাতে নয়া কৌশল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ফলে নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিবিএমএস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/প্রোগ্রাম পদে পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার্থীরা ওই পদের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন প্রশ্নপত্রের উপরে লেখা সহকারী ব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ রকম কোনো পদই ছিল না। ডিবিএমএস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/প্রোগ্রাম পদে পরীক্ষার ফি বাবদ নেওয়া হয়েছে এক হাজার ১১১ টাকা।

প্রশ্ন হাতে পেয়েই কপালে চোখ ওঠার মতো অবস্থা হয় পরীক্ষার্থীদের। প্রস্তুতি নিলাম এক বিষয়ের আর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অন্য বিষয়ের, এ অবস্থায় কী পরীক্ষা দেব? এমন প্রশ্নই চাকরি প্রত্যাশী বেকার তরুণদের। পরে অবশ্য উপায়ন্ত না দেখে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন পরীক্ষার্থীরা।

পরে পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে বিষয়টি জানালে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পরে সেই শিক্ষক বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষার্থীদের জানান যে তারা বলেছেন, প্রশ্ন এটাই। যখন সব পরীক্ষার্থী বের হবেন, তখন উপস্থিত বিমানের এক কর্মকর্তা পরীক্ষার্থীদের বলেন, আমরা সব পদের জন্য একই প্রশ্নপত্র করেছি, এ প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হবে, কেউ দিলে দেবেন, না দিলে আমাদের কিছু করার নেই।

ওই কথা শোনার পর পরীক্ষার্থীদের অনেকেই বের হয়ে যান। ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে পরীক্ষার্থী ছিল এক হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে রুম নম্বর ৩০০৪ ও ৩০০৭ থেকে অনেকেই বের হয়ে যান। পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত বিমানের এক কর্মকর্তা পরীক্ষার্থীদের জানান, প্রশ্নপত্রের ‘ক’ অংশের উত্তর করলেই চাকরির সুযোগ হতে পারে। এ কথা শুনে অনেকেই ‘ক’ অংশের উত্তর লেখেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পরীক্ষা হয় বিভিন্ন পদে। তাতে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নেন। ভুল প্রশ্নপত্র হওয়ায় অনেকে বের হয়ে গেলে তরিঘরি করে পরদিন অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার মধ্যে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। তাতে যারা শুধু ‘ক’ অংশের উত্তর দিয়েছিলেন, তাদের কেউ টেকেননি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আগামী ৪ মার্চ মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে।

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত ফল প্রকাশ ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজু শরীফ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা পড়েছি কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের সাবজেক্টের সঙ্গে সঙ্গতীপূর্ণ। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি, যে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে ওই পদের কথা উল্লেখই নেই, রয়েছে অন্য পদের কথা। অথচ আমাদের বলে দেওয়া হলো- এ প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হবে। কেউ দিলে দেবে, না দিলে নাই। এরপর অন্যান্য পদসহ পাঁচ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর খাতা কীভাবে পরদিন সকাল ৮টার মধ্যে দেখে বিমান রেজাল্ট দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের পছন্দের লোক টেকাতেই এমনটি করা হয়েছে। আমরা যারা পরীক্ষা দিতে পারলাম না, তাদের জন্য কিছুই করেনি। রুপক দাশ নামে আরেক পরীক্ষার্থীও একই অভিযোগ করেছেন।

এমন ভুলের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসলে সেদিন কিছুটা ভুল হয়েছে। প্রশ্ন জেনেরিক হয়েছে। আসলে আমাদের এয়ারলাইন্সে যে চাকরি হয়, সেখানে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট হোক আর এক্সিপেরিয়েন্সড গ্রাজুয়েট হোক, সরাসরি কাজ করতে পারেন না। তাদের দেশে ও দেশের বাইরে চার বছরের ট্রেনিং নিতে হয়। সেদিন প্রশ্নটা জেনেরিক হয়েছে, যা ঠিক হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে আপনারা নিজেদের লোককে পাস করিয়ে আনছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাস করিয়ে নিয়ে আসছি- এটা অথেনটিক না। আসলে যারা পাস করবেন, তারাই টিকবেন, তবে প্রশ্নটা রিলেটেড ছিল না।

এতে অন্যদের বঞ্চিত করা হলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ বলতে পারেন। আসলে আগে বিমানের সব পরীক্ষা হয় বুয়েট নিয়েছে, না হয় অন্য কোথাও হয়েছে। এবার বিমান নিজেই নিয়েছে, সেজন্য একটু ‘ইয়ে’ থাকতে পারে। কিন্তু কাউকে বঞ্চিত করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না।

তিনি বলেন, যারা বঞ্চিত হয়েছেন বলছেন, তারা তো আমাদের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করতে বলেন।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। পরীক্ষা হয়েছে উত্তরা স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে। তাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি ছিল ডিবিএমএস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/প্রোগ্রাম পদের পরীক্ষার্থী। এ পদে লোক নেওয়া হবে মাত্র ছয়জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর