বিদেশি গরু আমদানি না করার দাবি খামারিদের

জেলা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 04:16:53

নড়াইল: সামনে কোরবানির ঈদ। তাই গরু মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নড়াইল জেলার খামারিরা। দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করায় এখানকার গরুর চাহিদা রয়েছে জেলার বাইরেও। প্রতি বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারিরা ও কৃষকরা গরু মোটাতাজা করে থাকেন। বিদেশি গরু হাট-বাজারে না আসলে এ বছরও লাভবান হবেন খামারিরা। বিদেশি গরু আমদানি না করার দাবি জেলার খামারিদের।

জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার কৃষক ও খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে থাকে। চলতি বছরে ৩১ হাজার পশু মোটাতাজা করছে খামারিরা। যার মধ্যে ২৩ হাজার ৪শ দেশি গরু এবং ৭ হাজার ৬শ ছাগল রয়েছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে একটি দুটি করে গরু মোটাতাজা করে থাকে। বর্তমানে জেলায় মোট রেজিস্ট্রিকৃত গরুর খামার রয়েছে ৩৯৫টি (কোনো কৃষকের তিনটি গরুর বেশি থাকলে একটি খামার ধরা হয় )। দেশীয় পদ্ধতিতে কৃষকরা গরু মোটাতাজা করেন, তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। গত ঈদে আকার ভেদে প্রতিটা গরু ৩৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এখানকার কৃষকরা।

জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার চাকই, সিংগাশোলপুর, মির্জাপুর, শাহবাদ, জুড়ুলিয়া, ডুমুরতলা, লোহাগড়া উপজেলার শিয়েরবর, চাচই, কোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, মল্লিকপুর, মাকড়াইল, লাহুড়িয়া, কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া, মহাজন, টোনা, খাশিয়াল, বাবরা গ্রামের কৃষক ও খামারিরা অন্যন্য এলাকা থেকে পরিমাণে বেশি গরু মোটাতাজা করে থাকে। জেলায় মোট যে গরু মোটাতাজা করা হয় তার ৫৫ ভাগ করে খামারিরা আর বাকি ৪৫ ভাগ জেলার সাধারণ কৃষকরা।

পৌরসভার ডুমুরতলা এলাকার খামারি হাবিবুর রহমান বলেন,‘আমার খামারে ৩০টি গরু রয়েছে। গরুগুলোকে আমরা দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করে থাকি। খড়-ভুসি-খৈল এবং ঘাস খাইয়ে গরু পালন করি। এখানে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় না।‘

সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আমিন হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছরই আমি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকি। এ বছরও ৬ মাস আগে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি বাছুর কিনে লালন-পালন করছি। আশা করছি কোরবানিকে সামনে রেখে একটি গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করতে পারবো।’

চাকই গ্রামের কৃষক আরাফাত বলেন, ‘কোরবানিকে সামনে রেখে আমাদের এলাকায় প্রায় বাড়িতেই গরু মোটাতাজা করা হয়। সারা বছর খাবার হিসাবে কাজের ফাঁকে বিল থেকে কাঁচা ঘাস কেটে এনে খাওয়ানো হয় এবং ঈদের পূর্বে খড়, খৈল, কুঁড়া ও ভুষি খাওয়ানো হয়।’

লোহাগড়া উপজেলার শরশুনা গ্রামের খামারি আকবার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ গরু মোটাতাজা করে ঈদের সময় একটু বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। গত বছর ভারতীয় গরুর আমদানি কম থাকায় দেশি গরুর চাহিদা বেশি ছিল। এ বছরও যদি বাইরের গরু আমদানি করা না হয় খামারিরা লাভবান হবে। আর বাইরের গরু আমদানি করলে খামারিরা লোকসানে পড়বে।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মারফি হাসান জানান, বছর দশেক পূর্বে নড়াইলের কৃষকরা অল্প পরিসরে কোরবানির জন্য গরু মোটাতাজা করত। সে সময় সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকরা গরুর ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হত। গত কয়েক বছর ধরে সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় খামারিদের গরুর চাহিদা বাড়ছে। এতে করে স্থানীয় খামারি ও কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। তাই দিন দিন খামারির সংখ্যাও বাড়ছে। প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কৃষক বা খামারিদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। এছাড়া কৃষক ও খামারিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আশা করা যাচ্ছে এ বছরও জেলার খামারি ও কৃষকরা লাভবান হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর