ঠিক ১০০ বছর আগে এমনই এক বসন্ত দিনে, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টায়, তাঁর মহাজন্ম বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। রাতের জন্মক্ষণকে আলোকিত করে খোকা নামের সেই নবজাতক শোষিত-বঞ্চিত-পরাধীন বাংলাদেশে প্রজ্বলিত করেন স্বাধীনতা ও মুক্তির আলোক মশাল। বাঙালি জাতির হৃদয়ের মণিকোঠায় অভিসিক্ত হন তিনি মহাকালের মহানায়ক স্বরূপে। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞতায় সারা বাংলাদেশ ও সমগ্র বাঙালি জাতি তাঁর নাম দিয়েছে বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশের স্থপতি তিনি, তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের সুমহান রূপকার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির পরাধীন জীবনে এনেছে মুক্তির আলোকিত ভোর। দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক উত্থানের জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর জন্ম ও আগমনকে চিত্রিত করা যায় মহাকবির ভাষায়: ‘ওই মহামানব আসে। দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে। সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ। নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক। এল মহাজন্মের লগ্ন।’ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) জাতির জনকের জন্ম শতবর্ষের মহালগ্ন।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও আবির্ভাব বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি অনন্য ঘটনা। ত্যাগে, সংগ্রামে, প্রজ্ঞায়, দক্ষতায়, সুযোগ্য-গতিশীল নেতৃত্বে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন এবং জাতিসত্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি কেবল বাঙালির স্বার্থের সাথেই নয়, তাদের স্বপ্নের সাথেও নিজেকে একাত্ম করেছেন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক, যা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি জাতির অধিকার, আত্মমর্যাাদা ও পরিচিতি নির্মাণ করেছে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাংগঠনিক শক্তি সমগ্র জাতিকে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের নাগপাশ থেকে মুক্ত করে অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীপ্ত শপথে বলীয়ান করেছে। ব্যক্তির পরিচয় পেরিয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন জাতীয় ব্যক্তিত্বে এবং নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার অস্তিত্বের সঙ্গে।
চব্বিশ বছরের পাকিস্তানি দুঃশাসনে বঙ্গবন্ধু নয়বার কারারুদ্ধ হয়েছেন, এগারোটি মামলায় জর্জরিত হয়েছেন, দুইবার ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসেছেন এবং পরিশেষে পরিণত হয়েছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বাঙালি জাতির স্বপ্ন ও বাস্তবতার প্রতীক-পুরুষে।
জীবনের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে গড়ে ওঠে নেতৃত্বসুলভ মনোভাব। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উপায় হিসেবে তিনি সর্বদাই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইনানুগ-গণতান্ত্রিক পথ ও পন্থা বেছে নিয়েছেন। শোষণ, বঞ্চনা, স্বৈর ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে অবিচল পাহাড়ের মতো রুখে দাঁড়িয়েছেন। বাঙালির প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করে গড়ে তুলেছেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বাঙালি জাতির প্রিয় প্রতীকে পরিণত করেছেন নৌকাকে আর বাঙালির জাতীয় ধ্বনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে উজ্জীবিত করেছেন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অববাহিকার শাশ্বত বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিটি নারী ও পুরুষকে।
বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা, সংগ্রাম ও সাধনার পথে তিনি পরিণত হয়েছেন বাঙালি জাতির মহামুক্তির মহাপুরুষে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ের প্রতিটি পর্যায়ে মিশে আছেন তিনি। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬ দফা, সামরিক শাসনের বিরোধিতা, ভোটের অধিকার আদায় ইত্যাদি আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মোহনী নেতৃত্ব দিয়ে পুরো জাতিকে তিনি নিয়ে আসেন স্বাধীনতা অর্জনের মোহনায়। ১৯৭০ সালে অবিস্মরণীয় নির্বাচনী বিজয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি বাঙালি জাতির সর্বাত্মক আস্থা, বিশ্বাস ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ, যার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের প্রতিটি পর্যায় বিজয়ের গৌরবে উদ্ভাসিত। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ বাঙালি জাতির অধিকার আদায় ও মুক্তির জন্য নিবেদিত। অব্যাহত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির মহান নেতার আসনে অভিসিক্ত। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি রূপে তিনি প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের অলিন্দে সমাসীন।
বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধু উৎসর্গ করেন তাঁর সমগ্র জীবন। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেন। সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশের জন্য লড়াই করতে করতে বঙ্গবন্ধু জীবন বিলিয়ে দেন। দেশবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও তাঁর অম্লান স্বপ্নকে নিহত করা যায় নি। বাঙালি জাতির কল্যাণ ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন এবং সমগ্র জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা অমর ও অক্ষয় ভাবমূর্তিতে প্রতিটি বাঙালির মিলিত স্বপ্নে পরিণত হয়েছে তাঁর স্বপ্নের সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশে। দেশ ও জাতির প্রতিটি পদক্ষেপে, অর্জনে, গৌরবে বাঙালি জনতা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন প্রতিটি বাঙালির হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ হল এমনই এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যা স্বাধীন বাংলাদেশের সমুন্নত বাঙালি জাতির দীপ্ত পদভারে বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সর্বাত্মক উন্নতি ও অগ্রগতির পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা।
বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির প্রাণপুরুষ, বাংলার ইতিহাসের মহাকালের মহানেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম শতবর্ষের মহালগ্নে বাংলার, বাঙালির সংবাদ সারথি বার্তা২৪.কম জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদন করছে অসীম শ্রদ্ধা, গভীর কৃতজ্ঞতা ও প্রাণঢালা অভিবাদন।