দিন দিন বাড়ছে প্রাণঘাতী নোভেল করোন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে উন্নত বিশ্বের অনেকগ দেশ। আর এই করোনা থেকে বাঁচতেই কর্মস্থল ছেড়ে আকাশ পথে দেশে ফিরেছেন প্রবাসীরা।
বিদেশ ফেরত এসব প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আর সংক্রমণ ঠেকাতে 'কঠোর' অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। বিদেশ ফেরত এসব প্রবাসীদের ১৪ দিন করে হোম কোয়ারান্টাইনে (বাড়িতে সঙ্গরোধ) থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। নির্দেশনা না মানলেই করা হচ্ছে জেল জরিমানা।
গত কয়েকদিনে দেশে যত প্রবাসী ফিরেছেন তারা বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের বাসিন্দা। তাদের ১৪ দিন সঙ্গরোধে থাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য সরকারি বিভাগগুলো।
বরিশালে বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে সঙ্গরোধে রাখতে 'কঠোর' অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডাক্তার শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল জানান, বরিশালে ফিরেছেন এমন প্রবাসীদের শনাক্ত এবং করোনা সন্দেহ আক্রান্তদের খুঁজে বের করে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছেন।
এছাড়াও তাদেরকে সঙ্গরোধে আনার পর থেকে প্রশাসনের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় কঠোর নিয়েছে মেহেরপুরের প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলছে নানা প্রস্তুতি। এবিষয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল আলম বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনের (সঙ্গরোধ) বাইরে যদি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন (সঙ্গরোধ) প্রয়োজন হয় সেজন্য আগে থেকে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি।
গত তিন দিন ধরে মাদারীপুরের শিবচরের চারটি এলাকার বাসিন্দাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। শিবচর পৌর বাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ দু'টি ওয়ার্ড ও দু'টি ইউনিয়নের দুই গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে ২৫০ পুলিশ। এসব এলাকার ১৬টি পয়েন্টে পুলিশ পাহারায় রেখে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
তবে বাড়িতে সঙ্গরোধ বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের এবং বন্ধ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাড়ি বাড়ি শিবচর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রীও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুরে বিদেশ থেকে আগত প্রবাসীদের ১৪ দিন সঙ্গরোধে থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সে সাথে নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ায় বিদেশ ফেরতদের শনাক্ত করে তাদের বাড়ির সামনে লাল নিশানা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, 'প্রবাসীদের কড়া নজরে রাখা হয়েছে। তাদের বাড়ির ফটকের সামনে দেশে আসার তারিখও লিখে স্টিকার সেটে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীর হাতে সিল লাগানো হয়েছে। তারা যাতে ঘরের বাইরে ১৪ দিন বের না হতে পারে, সে ব্যাপারে পুলিশ সজাগ রয়েছে।
পটুয়াখালীতে বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের ফোনে আশ্বস্ত করছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মঈনুল হাসান। তিনি জানান, সর্বশক্তি দিয়ে এবং সবাই মিলে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। বর্তমানে সবাইকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যারা বাড়িতে সঙ্গরোধে রয়েছেন, তাদের কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানালে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।